শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
ইউএফও আর ভিনগ্রহের প্রাণী

মার্কিন গোপন রিপোর্টে কী আছে?

মার্কিন গোপন রিপোর্টে কী আছে?

ইউএফও মানে ‘আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্টস’ বা অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, পৃথিবীর নানা দেশে নানা সময় আকাশে উড়তে দেখা গেছে এগুলোকে। কখনো গোলাকার, কথনো চারকোনা, কখনো চাকতির মতো বিচিত্র আকারের নভোযানের মতো দেখতে এগুলো। দৃষ্টিগোচর হওয়ার পরই আবার অত্যন্ত দ্রুতগতিতে উড়ে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। বৈমানিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত বহুজন এই রহস্যময় উড়ন্ত যান দেখার কথা বলেছেন, কিন্তু অনেকেই তাদের বর্ণনা বিশ্বাস করেন না। এগুলো নিয়ে সিনেমাও কম হয়নি। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক দফতর পেন্টাগনে এ নিয়ে আলাদা সেলও আছে। তা জানতে কোটি কোটি ডলার খরচও করেছে।

অনেকের ধারণা এগুলো গোপন কোনো সামরিক বিমানের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন, আবার কেউ বলেন এগুলো ভিনগ্রহ থেকে আসা বুদ্ধিমান প্রাণীদের নভোযান। আসলে এগুলো ঠিক কি না তা কেউই জানে না। অন্তত এখন পর্যন্ত। তবে এ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করতে যাচ্ছে মার্কিন সরকার, আর তা দু-এক দিনের মধ্যেই। এ রিপোর্টটি এত দিন ক্লাসিফায়েড    অর্থাৎ অতি গোপনীয় অবস্থায় ছিল। কিন্তু মার্কিন সামরিক বাহিনীর   ভিতর থেকেই আকাশে ইউএফও দেখতে পাওয়ার এত অসংখ্য রিপোর্ট এসেছে যে মার্কিন কংগ্রেস এই রিপোর্টটি চেয়ে পাঠিয়েছে। অনেকে বলছেন, ইউএফওগুলো যে অন্য কোনো গ্রহ থেকে এসেছে এমন মতবাদের পক্ষে নিশ্চিত প্রমাণ খুবই কম। তাই রিপোর্টটি প্রকাশ করলেও মানুষের ধারণায় কতটা পরিবর্তন আসবে, তা দেখার বিষয়। গত বছরের আগস্ট মাসে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর বা পেন্টাগন একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে- যার উদ্দেশ্য ছিল অজানা উড়ন্ত বস্তু দেখতে পাবার বিবরণগুলো পরীক্ষা করে দেখা। এর নাম ছিল আনআইডেন্টিফায়েড এরিয়াল ফেনোমেনা টাস্ক ফোর্স। এর দায়িত্ব ছিল এসব ঘটনা ‘চিহ্নিত করা, বিশ্লেষণ ও তালিকাভুক্ত করা। তা ছাড়া ইউএফও’র প্রকৃতি এবং উৎস সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা। রিপোর্টটিতে গত দুই দশকের ১২০টি ইউএফও-সংক্রান্ত ঘটনাকে বিশ্লেষণ করা হয়।

এর মধ্যে ছিল তিনটি ভিডিও যা গত বছর পেন্টাগন ডি-ক্লাসিফাই করে অর্থাৎ আগে গোপন রাখা হয়েছিল এমন অবস্থা থেকে জনসমক্ষে প্রকাশ করে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে কিছু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেছেন রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ‘ভিনগ্রহের মানুষের কর্মকান্ডের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে এমন সম্ভাবনা বাতিল করেও দেওয়া হয়নি।’

কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ : এই কথিত ভিনগ্রহের প্রাণীদের নভোযানে চড়ে পৃথিবীতে আসার তত্ত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা যুক্তি দিয়ে আসছেন একদল লোক যাদের বলা হয় ইউএফওলজিস্ট। এরা বলেন, এই ইউএফওর অস্তিত্বের অনেক প্রমাণ আছে, কিন্তু সরকার এগুলো দীর্ঘদিন ধরে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। এ কারণে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছিল যেন তারা কথিত ভিনগ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে কী জানে তা প্রকাশ করে। আকাশপথে আসা সম্ভাব্য হুমকি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি কর্মসূচি আছে যার সম্পর্কে লোকে খুব বেশি জানে না। এর নাম অ্যাডভান্সড অ্যারোস্পেস থ্রেট আইডেন্টিফিকেশন প্রোগ্রাম।

এরই আওতায় পেন্টাগন ২০০৭ সাল থেকেই ইউএফও সম্পর্কে উপাত্ত সংগ্রহ করে আসছে।

এ ব্যাপারে তথ্য প্রমাণ কী আছে : বেশ কিছু মার্কিন সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইউএফও দেখার ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। এর মধ্যে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনাগুলো এসেছে পাইলটদের কাছ থেকে। সামরিক অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাছাকাছি ইউএফও উড়ছে- এ দৃশ্য তারা ককপিট থেকেই দেখতে পেয়েছেন। মার্চ মাসে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরিচালক জন র?্যাটক্লিফ ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, খবরে যতটুকু প্রকাশ করা হয় তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক ইউএফও দেখা গেছে।

ভিনগ্রহের সঙ্গে সম্পাদিত একটি চুক্তি : গত ডিসেম্বর মাসে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মহাকাশ দফতরের সাবেক প্রধান হাইম এশেদ স্থানীয় একটি সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ট্রাম্প ‘ভিনগ্রহের সঙ্গে সম্পাদিত একটি চুক্তির অস্তিত্ব’ প্রকাশ করার কাছাকাছি চলে এসেছিলেন কিন্তু মানুষের মধ্যে এ নিয়ে বেশি হৈচৈ পড়ে যাবে- এই ভয়ে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন ইউএফও সম্পর্কে তিনি যা জানেন তা কখনো প্রকাশ করবেন না। এখন মার্কিন সরকার এই আগ্রহের জিনিস নিয়ে কী তথ্য প্রকাশ করে তা জানতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বিশ্ব। বিবিসি

সর্বশেষ খবর