জম্মু-কাশ্মীরে বিশেষ ও রাজ্যের মর্যাদা না ফেরানো পর্যন্ত ‘ক্ষমতার রাজনীতি’ বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিলেন ‘পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি’ (পিডিপি) সভাপতি মেহবুবা মুফতি।
গত ২৪ জুন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে সেখানকার মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মেহবুবা। গতকাল একটি সর্বভারতীয় বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমে (ইন্ডিয়া টুডে) একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মুফতি জানান, ‘আমি জানি যে, ৩৭০ ও ৩৫/এ ধারা পুনরুদ্ধারের বিষয়টি এমন নয় যে, কেন্দ্র প্লেটে করে তা সাজিয়ে দেবে। কিন্তু কোথাও আপনাকে এর প্রক্রিয়া শুরু করতেই হবে। আমরা এর জন্য লড়াই করব। আর এটা অর্জন না করা পর্যন্ত গুপকার জোট একসঙ্গে কাজ করবে।’ তার অভিযোগ ‘ভারতীয় সংবিধান আমাদের যে অধিকার দিয়েছিল, আমরা তা ফেরত চাই। নিজেদের নির্বাচনী সুবিধা লাভের জন্য ৩৭০ ধারার বিলোপ ঘটিয়ে তারা (কেন্দ্র) ভারতীয় সংবিধানের অধিকার খর্ব করেছে।’
তাঁর অভিমত ‘৩৭০ ও ৩৫/এ হলো এমন ধারা- যার বলে জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল, সেটা ২০১৯ সালে প্রত্যাহার করা হয়। যারা ভারতীয় সংবিধানে বিশ্বাসী, তাদের সঙ্গে এই ইস্যুগুলোও অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাই এ ধারা ফিরিয়ে আনার দাবি কোনোমতেই ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দাবি’ হতে পারে না।উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা, ৩৫/এ ধারা প্রত্যাহার করে ওই রাজ্যকে দুটি কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে (জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ) ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার। এর ফলে বিশেষ মর্যাদা হারায় উপত্যকা। জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গর্জে ওঠে উপত্যকার অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। ফলে অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কায় ফারুক আবদুল্লাহ, ওমর আবদুল্লাহ, মেহবুবা মুফতিসহ উপত্যকার একাধিক রাজনৈতিক নেতাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি হলে গত বছরই একে একে মুক্তি দেওয়া হয় সব গৃহবন্দী নেতাকে।
এরই মধ্যে বিজেপি ও কংগ্রেস ব্যতীত উপত্যকার মূল ধারার ছয়টি রাজনৈতিক দল মিলে তৈরি করে ‘পিপলস অ্যালায়েন্স ফর গুপকার ডিক্লারেশন’। ওই জোটের প্রধান দাবিই ছিল ভূস্বর্গে ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনা। এরই মধ্যে গত ২৪ জুন জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। মেহবুবা মুফতি ছাড়াও ওই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমুন্ত্রী ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স’ (এনসি) দলের সভাপতি ফারুক আবদুল্লাহ, এনসি নেতা ওমর আবদুল্লাহ, কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ, সিপিআইএম নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ তারিগামি, বিজেপি নেতা রবীন্দর রাইনা, নির্মল সিং-সহ একাধিক নেতা। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং, দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, জম্মু-কাশ্মীরের লেফট্যনেন্ট গভর্নর মনোজ সিনহাসহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বৈঠকে প্রায় সব নেতাই জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া, গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচন করা, ডোমিসাইল আইনে বদল ঘটানোসহ একগুচ্ছ দাবিতে সরব হন।
তবে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া বা সেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করাটা প্রধান অগ্রাধিকার নয়, বরং এ মুহূর্তে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের বিশ্বাস অর্জন করাটাই সব থেকে বেশি দরকার বলে মনে করেন মেহবুবা মুফতি, যাতে সেখানকার ভুক্তভোগী মানুষের জীবনযাপনের মানের উন্নয়ন ঘটানো যায়।’
এ ব্যাপারে জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা ওই টিভি চ্যানেলকে জানান, ‘আমি পরিষ্কার বলতে চাই, আমি নির্বাচনের দাবি নিয়ে দিল্লিতে আসিনি। আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে বলতে এসেছি যে, তারা যেন উপত্যকার মানুষের আস্থা অর্জন করতে সচেষ্ট হয়। জম্মু-কাশ্মীরের যেসব মানুষ কষ্টের মধ্যে আছেন, কেন্দ্র যেন তাদের প্রত্যেকের কাছে পৌঁছয় এবং তাদের মধ্যে যে ‘মনের দূরত্ব’ সেটা দূর করার চেষ্টা করে।’
তার অভিমত, জম্মু-কাশ্মীরে যেভাবে মানুষকে ভয় দেখানো হচ্ছে, তা এখনি বন্ধ হওয়া দরকার। এ ধরনের ‘ডোমিসাইল অর্ডার’ বন্ধ হওয়া দরকার। শুভেচ্ছার বার্তা হিসেবে বন্দীদের মুক্তি দেওয়া উচিত। সেখানে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা তুলে দেওয়া উচিত। যদি এ ধরনের ছোট ছোট পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তবে সর্বদলীয় বৈঠক কেবলমাত্র একটা ফটোশুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বেশি ফলপ্রসূ হবে।