শনিবার, ৩ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা

অধিবেশনের শুরুতেই বিজেপির বিক্ষোভ, বেরিয়ে গেলেন রাজ্যপাল

অধিবেশনের শুরুতেই বিজেপির বিক্ষোভ, বেরিয়ে গেলেন রাজ্যপাল

রাজ্যপাল ধনখড়কে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও স্পিকার বিমান ব্যানার্জি

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় গতকাল রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় তার বাজেট অধিবেশনে নির্ধারিত ভাষণ শুরু করেও শেষ করতে পারেননি। বিজেপি বিধায়কদের তুমুল বিক্ষোভে রাজ্যপাল তার ভাষণ অসম্পূর্ণ রেখেই ফিরে যেতে বাধ্য হন। রাজ্যপাল তার ভাষণ শুরু করা মাত্র বিজেপির বিধায়করা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিজেপি বিধায়করা জানান, রাজ্যপালকে দিয়ে মিথ্যা বক্তব্য বলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তারা তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ১৪ পাতার বক্তব্যের মাত্র দুটি পাতা পড়তে পেরেছিলেন রাজ্যপাল। মাত্র ৪ মিনিট বক্তৃতা দিতে পেরেছিলেন রাজ্যপাল।

তৃতীয়বার তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর গতকাল থেকে বিধানসভার বাজেট অধিবেশন শুরুর কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল, স্পিকার- সবাই বিধানসভায় হাজির হলে অধিবেশন শুরু হয়। প্রথা অনুযায়ী, রাজ্যপালের উদ্বোধনী ভাষণ দিয়ে বিধানসভার কার্যপদ্ধতির সূচনা হয়। এবার কভিড পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের সেই ভাষণের লাইভ সম্প্রচার হয়নি। তা ঘিরে আগেই অসন্তোষ ছিল। তবে তিনি ভাষণ শুরুর পরপরই বিজেপি বিধায়করা ওয়েলে নেমে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করে দেন। রাজ্যে ভোট পরবর্তী সহিংসায় আক্রান্তদের ছবি নিয়ে চলে বিক্ষোভ। ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাল্টা তৃণমূল বিধায়করাও হইহট্টগোল জুড়ে দেন। ‘ধনকড় হঠাও’, ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখর হন শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা। এ অবস্থায় মাত্র ৪ মিনিট ভাষণ দেওয়ার পরই এই নজিরবিহীন বিক্ষোভে তিনি থামিয়ে দিতে বাধ্য হন। মুখ্যমন্ত্রী ও স্পিকার তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজ্যপাল বেরিয়ে যান।

সূত্রের খবর, বিধানসভায় সরকারকে চাপে ফেলতে এমনই কৌশল নিয়েছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরামর্শেই এই সিদ্ধান্ত। ভোট-পরবর্তী সহিংসতা বন্ধের দাবিতে বিজেপি বিক্ষোভ ও ওয়াকআউট করেছে বলে জানিয়েছেন বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা। তবে অন্যরা বেরিয়ে গেলেও কক্ষে থেকে যান মুকুল রায়। তাঁর সঙ্গে গিয়ে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী, স্পিকার। তবে বিধানসভায় এ ধরনের বিক্ষোভ নজিরবিহীন বলেই মত বিশ্লেষকদের। রাজ্যপালের উদ্বোধনী ভাষণেই এমন বিশৃঙ্খলা সাম্প্রতিক সময়ে হয়েছে বলে মনে করতে পারেন না কেউই। আসলে, রাজ্য সরকারের লিখে দেওয়া খসড়া বক্তৃতাই মূলত পড়তে হয় রাজ্যপালকে। আর তাতেই আপত্তি বিরোধী বিজেপির। তাই তাঁরা শুরুতেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন, এমনই খবর বিজেপি সূত্রে।

এদিন, বিধানসভায় এসেই আম্বদকরের মূর্তিতে মালা দেন রাজ্যপাল। তার পরেই তিনি চলে যান বিধানসভা কক্ষে।  আসন গ্রহণ করে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর ভাষণ পাঠ করতে যান। তখনই প্রবল হই-হট্টগোল শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা। তবে, ভাষণ নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারে একটা সংঘাত ছিলই। ওই ভাষণের সবটুকু রাজ্যপাল পাঠ করবেন কি না তা নিয়ে একটা আশঙ্কা ছিলই। তবে রাজ্য সরকার জানিয়ে দেয় মন্ত্রিসভা অনুমোদিত ভাষণই তাঁকে পাঠ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারের একটা আশঙ্কা ছিল বিরোধীরা ওই ভাষণ নিয়ে আপত্তি তুলে হই-হট্টগোল করতে পারে। সেইমতো সরকার পক্ষের বিধায়কদের সংযম দেখানোর কথাও বলা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের বিক্ষোভে ভাষণ শেষই করতে পারলেন না ধনখড়। 

রাজ্যপাল কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই বিজেপি বিধায়করা অধিবেশন ছেড়ে বেরিয়ে যান। তখন বিরোধী বলতে ভিতরে শুধু সংযুক্ত মোর্চার একমাত্র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী।

রাজ্যপালকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে কক্ষে ফিরে আসেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তারপর মুখ্যমন্ত্রী বেশিক্ষণ কক্ষে ছিলেন না। তিনিও বেরিয়ে যান। তবে বেরিয়ে যাওয়ার আগে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রী কয়েক সেকেন্ড কথা বলছেন মুকুল রায়ের সঙ্গে। মুকুল রায় এদিন অধিবেশনে বিজেপির আসনেই বসেছেন। অনেকের মতে, পিএসি চেয়ারম্যান নিয়ে সংঘাতের আবহে মুখ্যমন্ত্রী যেদিন বলেছিলেন মুকুল তো বিজেপি পার্টিরই মেম্বার সেদিনই এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বাস্তবে সেটাই হলো।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর