মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

আফগানিস্তান ফের চলে যাচ্ছে তালেবানদের হাতে!

আফগানিস্তান ফের চলে যাচ্ছে তালেবানদের হাতে!

ন্যাটোর ঠিক করা আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ সময়সীমার পরও যদি আফগানিস্তানে কোনো বিদেশি সৈন্য রয়ে যায়, তবে তারা দখলদার বাহিনীতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে, বিবিসিকে বলেছে তালেবান। এমন সময়ে তালেবান এই কথা বলছে, যখন খবর বেরিয়েছে যে আমেরিকা আফগানিস্তানে এক হাজার সৈন্য রাখতে চায় মূলত কূটনৈতিক মিশন এবং কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বছরের সামরিক অভিযান সমাপ্তির অপেক্ষায়। কিন্তু তালেবান নতুন নতুন এলাকা দখল করায় দেশটিতে সহিংসতা বাড়ছে।

মার্কিন সৈন্যরা আফগান ছাড়ছে। এই খবরের পর থেকেই তালেবান তাদের শক্তি বাড়িয়ে চলছে। চলতি মাস পর্যন্ত অন্তত ১৪৩টি জেলার দখল নিতে সমর্থ হয়েছে তালেবান। আর সেখানে ইতিমধ্যে শরিয়া আইনও চালু করেছে। পুরুষদের অবশ্যই দাড়ি রাখতে হবে। আর কোনো নারী একা রাস্তায় বেরোতে পারবে না। এর মধ্যে আবার অনেক স্থানে সরকারি বাহিনী তালেবানদের সঙ্গে লড়াইয়ে না গিয়ে পিছু হটায় অঞ্চলগুলো কাবুল প্রশাসনের হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি বাহিনীর অনেক সদস্য শুধু মাঠই ছেড়ে যায়নি; অনেকে এমনকি দেশ ছেড়ে তাজিকিস্তান সীমান্তের দিকে অগ্রসর হয়েছে।

শনিবার এক দিনেই দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী তাজিকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে আফগান বাহিনীর তিন শতাধিক সদস্য। রবিবার তাজিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তালেবানদের যোদ্ধারা সীমান্তের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আফগানিস্তানের বদখশান প্রদেশের তিন শতাধিক সরকারি সেনা সীমান্ত অতিক্রম করেছে। মানবতা এবং সুপ্রতিবেশীর নীতির আলোকে আফগান সেনাদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আলজাজিরা জানিয়েছে, আফগানিস্তানের ৪২১টি জেলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন বাহিনীর আফগানিস্তান ত্যাগের সময়সীমা ঘোষণার পরই দেশজুড়ে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে সমর্থ হয় তালেবান। কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই সরকারি বাহিনীর সদস্যদের প্রস্থানকে নৈতিকতার অভাব হিসেবে দেখছেন বদখশান প্রদেশের কাউন্সিল সদস্য মহিব উল রাহমান। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর মনোবলের অভাবের কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এদিকে এএফপি জানিয়েছে, আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে গত শনিবার রাতভর লড়াইয়ের পর পুরনো ঘাঁটি কান্দাহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা দখল করেছে তালেবান। মহিব উল রাহমান আক্ষেপ করে বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেশিরভাগ জেলা কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই তালেবানের হাতে চলে গেছে। গত তিন দিনে তালেবানের দখলে যাওয়া ১০ জেলার আটটিতেই কোনো প্রতিরোধের ঘটনা ঘটেনি। কান্দাহার শহরটি দখলের উদ্দেশ্যে গত কয়েক বছর ধরে পাঞ্জওয়াই এবং এর আশপাশে তালেবান ও আফগান বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনী তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করার আগ পর্যন্ত কান্দাহার ছিল তালেবানের প্রশাসনিক রাজধানী। এই প্রদেশেই তালেবানের জন্ম হয়েছিল। ফলে তালেবানের কাছে কান্দাহার দখলই প্রধান টার্গেট। এবার পাঞ্জওয়াই দখলের মধ্য দিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণে অনেকটা এগিয়ে গেল এই সশস্ত্র উগ্রপন্থি গোষ্ঠী।

এর মধ্যে আবার মার্কিন সৈন্য থেকে যাওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে দেখছে না তালেবান। তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহীন বিবিসিকে বলেন, সামরিকভাবে কাবুল দখল করা ‘তালিবানদের নীতি নয়’। কিন্তু কাতারে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির অফিসে বসে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মি. শাহীন বলেন, প্রত্যাহার সম্পূর্ণরূপে শেষ হওয়ার পর কাবুলে কোনো বিদেশি সৈন্য এবং সামরিক কনট্রাক্টরের থাকা উচিত নয়। দোহা চুক্তির বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যদি কোনো সৈন্য রেখে যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে আমাদের নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবে আমরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কূটনীতিবিদ, এনজিওকর্মী এবং বিদেশি বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হবে না। ফলে তাদের সুরক্ষার জন্য কোনো বাহিনী দরকার নেই।

সর্বশেষ খবর