মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
করোনায় বিধ্বস্ত ইন্দোনেশিয়া

মৃত্যুর শীর্ষে ব্রাজিল, সংক্রমণে ভারত

মৃত্যুর শীর্ষে ব্রাজিল, সংক্রমণে ভারত

এশিয়ার দেশগুলোতে ভারত থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে বেসামাল অবস্থায় পড়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটিতে সংক্রমণ ও মৃত্যু লাফিয়ে বাড়তে থাকায় দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের ভয়াবহ সংকট। এদিকে বিশ্ব পরিস্থিতি অনুযায়ী, বর্তমানে করোনা সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে ভারত এবং মৃত্যুতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল। রয়টার্স, বিবিসি।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে বেশ কয়েকটি শহরের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট দেখা দিযেছে। এ পরিস্থিতিতে গ্যাস শিল্পকারখানাগুলোকে মেডিকেল অক্সিজেন উৎপাদনে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। হাসপাতাগুলো জানিয়েছে, তাদের অক্সিজেন সরবরাহ প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। এসব হাসপাতালগুলোর মধ্যে একটি জানিয়েছে, অক্সিজেন সংকটের কারণে তাদের এখানে ৬৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ইন্দোনেশিয়ায় প্রতিদিন এখন ২৫ হাজারেরও বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ভ্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ও করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে পড়ে সংকট আরও গুরুতর হয়েছে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। এখানে শনাক্ত মোট রোগীর সংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ আর এদের মধ্যে ৬০ হাজারেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে। তবে রাজধানী জাকার্তার বাইরে পর্যাপ্ত পরীক্ষা না হওয়ায় প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশটির মূল দ্বীপ জাভায় লকডাউন জারি করা হয়েছে, পাশাপাশি গত সপ্তাহ থেকে পর্যটন দ্বীপ বালিতেও এ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

 

জানা গেছে, গতকাল বানডুংয়ের দুটি হাসপাতাল তাদের অক্সিজেনের মজুদ ফুরিয়ে গেছে, আর এ কারণে জরুরি চিকিৎসার জন্য আসা নতুন রোগী আর ভর্তি নিচ্ছে না বলে ঘোষণা করেছে। শনি ও রবিবার বানডুং, সুরাকার্তা ও পামেকাসান শহরের সরকারি হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগ ও ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটগুলো জানায়, তারা রোগীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। কয়েকটি হাসপাতাল রোগীদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে, অন্যরা মূল ভবনের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে অতিরিক্ত রোগী ভর্তির ব্যবস্থা করেছে। বানডুংয়ের রিজিওনাল জেনারেল হসপিটাল (আরএসইউডি) ২ জুলাই থেকে কভিড রোগীর জন্য হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বন্ধ করে দিয়েছে, অক্সিজেনের সংকট এর অন্যতম কারণ।

সার্বিক পরিস্থিতি : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত রবিবার ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬ হাজার ৪২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৪৬১ জনের। আর গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৮ হাজার ২৯৬ জন। এই সময়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে, অপরদিকে এক দিনে সংক্রমণের শীর্ষে ভারত। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬ হাজার ৯৮০ জনের মৃত্যু হয়। একই সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৯ জনের। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বিশ্বে ১৮ কোটি ৪৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫১ জন প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ২০৮ জনের।

করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুতে এখন পর্যন্ত বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৯২ হাজার ৩৭৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬ লাখ ২১ হাজার ২৯৩ জন। আর তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে গত রবিবার ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ হাজার ৩৮৭ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৮৭২ জনে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ২ হাজার ৭৫৮ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৭৪৩ জন।

তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। যদিও মৃত্যুর দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে তারা। সেখানে রবিবার ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৭৬ জন। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৫ লাখ ২৪ হাজার ৪৭৫ জনে। এ ছাড়া এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৮৭ লাখ ৬৯ হাজার ৮০৮ জন। সংক্রমণ ও মৃত্যুর তালিকায় এর পরের স্থানগুলোতে রয়েছে ফ্রান্স, রাশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া ও ইতালি।

তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩০ নম্বরে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উদ্বেগজনক হারে দেশে বাড়ছে সংক্রমণের হার ও মৃত্যু। তালিকায় বাংলাদেশের আগে রয়েছে পাকিস্তান আর পরের অবস্থান পর্তুগালের।

সর্বশেষ খবর