বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রস্তাব পাস রাজ্য বিধানসভায়

পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা

পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা

ভারতের কেন্দ্রের মতো রাজ্যেও দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিধান পাস করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা আছে, বিধান পরিষদ দীর্ঘদিন আগেই অবলুপ্ত হয়েছে। এবার সেই বিধান পরিষদ সক্রিয় করছেন মমতা। গত ভোটের আগেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন ভোটে জিতলে বিধানসভার পাশাপাশি বিধান পরিষদ গঠন করবেন। অর্থাৎ রাজ্য সরকার হবে দুই স্তরের। সে কথা রাখলেন তিনি। গতকাল বিধানসভায় এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পাস হয়েছে। এর ফলে যেসব নেতাকে তিনি প্রার্থী করতে পারেননি, তাদের বিধান পরিষদে নিয়ে আসছেন। এখন রাজ্যপাল অনুমোদন করলে বিলটি যাবে ভারতীয় সংসদে। সেখানে অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি সই করলে পশ্চিমবঙ্গে বিধান পরিষদ হবে। এক কথায়, দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। আর বিজেপি এ বিলের বিরোধিতা করবে তা জানাই ছিল। হয়েছেও তাই।

৩৪ বছর বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসে মমতা বলেছিলেন, এ রাজ্যের আইনসভার উচ্চকক্ষ হবে বিধান পরিষদ আর নিম্নকক্ষ হবে বিধানসভা। যেমনটা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনার জন্য রয়েছে উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা এবং নিম্নকক্ষ লোকসভা। কিন্তু একটানা ১০ বছর ক্ষমতায় থেকেও মমতা এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। এবার তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে এ কাজে হাত দিলেন। বিধানসভায় ২৯৪ আসন থাকলেও বিধান পরিষদে কত আসন থাকবে, এখনো জানানো হয়নি।

এমন নয় যে পশ্চিমবঙ্গে বিধান পরিষদ ছিল না। ১৯৫২ সালে বিধানসভার পাশাপাশি বিধান পরিষদও গঠিত হয়। কিন্তু ’৬৯ সালে বিধানসভা ও সংসদে আইন পাস করে তার অবলুপ্তি ঘটানো হয়। সেই বিধান পরিষদের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না। সিংহভাগ বিলই আলোচনা না করে পাস করে দেওয়া হয়েছিল। এখনো উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র ও কর্ণাটকে বিধান পরিষদ আছে। কিন্তু বিধান পরিষদে আলোচনা নিয়ে খবর হয়েছে এমন দুর্নাম কেউ দিতে পারবেন না। উদ্ধব ঠাকরে বিধানসভায় প্রার্থী ছিলেন না। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বিধান পরিষদ সদস্য হয়েছেন। ফলে তাকে আর ভোটে দাঁড়াতে হয়নি। উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ বিধান পরিষদ সদস্য। তিনিও বিধানসভার ভোটে দাঁড়াননি। বিহারে নীতীশ কুমারও বিধান পরিষদের সদস্য। তিনজনই দাঁড়ালে হেসে-খেলে জিততেন। তা-ও দাঁড়াননি। বিধান পরিষদ থাকার সুবিধাটা নিয়েছেন। বিধান পরিষদ না থাকায় সে সুবিধা মমতাসহ অন্য মুখ্যমন্ত্রীরা নিতে পারছেন না।

তবে এ বিলকে ভালোভাবে দেখছে না বিজেপি। বিরোধীদলীয় নেতা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘এটা অর্থের অপচয় ছাড়া কিছু নয়। কোটি কোটি টাকা খরচ করার এক নতুন প্রয়াস।’ শুভেন্দু এ কথাও বলেছেন, ‘পরাজিতদের পুনর্বাসিত করার জন্য পেছনের দরজা দিয়ে তাদের   আইনসভায় ঢোকানোর এ প্রচেষ্টা মমতার।’ তিনি বলেন, ‘এ বিধান পরিষদ পুষতে পাঁচ বছরে ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি রুপি খরচ হবে। তাই আমরা এ বিলের বিপক্ষে।’

তবে বিলের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘বিধান পরিষদ কি সংবিধানবহির্ভূত? রাজ্যের কাজে গতি আনতে আমরা আইনসভার দুই কক্ষ চাই। বিধান পরিষদ ও বিধানসভা।’ তবে বিধানসভার ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) একমাত্র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিও আপত্তি তুলেছেন। তিনি এ বিধান পরিষদ বিলের বিরুদ্ধে। আর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এ বিলে আপত্তি জানিয়ে  বলেন, ‘বিধান পরিষদ গঠনের নামে এবার মমতা  সাদা হাতি পুষতে চাইছেন।’ তিনি বলেন, ‘রাজ্যবাসীর স্বার্থ ও রাজ্যের বর্তমান আর্থসামাজিক অবস্থা  বিবেচনা না করে কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এ প্রস্তাব পাস করিয়েছেন।’ মমতা বলেছেন, বিধানসভায় সিপিএম ও কংগ্রেস শূন্য হলেও তাদের প্রতিনিধি নেওয়া হবে এ বিধান পরিষদে।

সর্বশেষ খবর