শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

পশ্চিমবঙ্গ ভাগের দাবি করা নেতারা কেন্দ্রে মন্ত্রী, বিতর্ক

বিজেপি নেতা নিশীথ প্রামাণিক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন

কিছুদিন আগেই তারা পশ্চিমবঙ্গ ভেঙে উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা রাজ্য দাবি করেছিলেন। অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গ ভাগ করার কথা বলেছিলেন। মমতা ক্ষমতায় থাকলে উত্তরবঙ্গে কোনো উন্নতি হবে না দাবি করে এই বিজেপি নেতারা সেই কথা বলেছিলেন। সেই বিজেপি নেতা জন বার্লা ও নিশীথ প্রামাণিক এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। নিশীথ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। তার পরই বিরোধীরা প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন, এটা কি বাংলা ভাগের দাবি তোলার পুরস্কার? তৃণমূলের আশঙ্কা, যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ দখলে বিজেপি ব্যর্থ হয়েছে, তাই এবার তারা বাংলা ভাগ করতে উদ্যোগী হতে পারে।

এ অবস্থার মধ্যে পড়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ ভাগের বিরুদ্ধে। এটাই দলের অবস্থান। দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়া জন বার্লা বা অন্য কেউ যদি এ রকম কিছু বলেন, তা হলে আমাদের উপরতলায় জানাতে হবে।’ দিলীপ জানিয়েছেন, তিনি দল ও সরকার দুই দিকেই বলবেন। তবে উত্তরবঙ্গের সংসদ সদস্য হিসেবে তারা দাবিদাওয়া জানাবেন সেটা স্বাভাবিক। জন বার্লারা এর আগে যখন আলাদা উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবি করেছিলেন, তখনো দিলীপ ঘোষ তার বিরোধিতা করেছিলেন।

দিলীপ এই কথা বলা সত্ত্বেও জন বার্লা আগের দাবি থেকে সরে আসেননি। দিল্লিতে দায়িত্ব নেওয়ার পরও তিনি বলেছেন, এই বিভাজনের দরকার আছে। আনন্দবাজারের রিপোর্ট বলছে, ‘বার্লা বলেছেন, উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য করার দাবি একশ বছরের পুরনো। আমি কেন্দ্রের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলব। জনগণের দাবিকে দাবিয়ে রাখা যাবে না।’ তৃণমূল মনে করছে, জন বার্লাদের কেন্দ্রে মন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গ ভাগের বিষয়টি উসকে দিচ্ছে। দলের মুখপাত্র সুখেন্দু শেখর রায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘বিজেপি তো পশ্চিমবঙ্গ দখল করতে চেয়েছিল। যখন তারা তা পারল না, তখন তারা উত্তরবঙ্গকে আলাদা করার কথা বলছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের মানুষ কোনোদিন আলাদা রাজ্যের দাবি তোলেননি।’

তবে বিজেপির রাজ্য নেতারাও দাবির বিপক্ষে কাজ শুরু করেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর মতে, জন বার্লাদের যে কেন্দ্রে মন্ত্রী করা হয়েছে, সেটা উত্তরবঙ্গকে আলাদা দাবির পুরস্কার নয়।

ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ‘যারা আলাদা রাজ্য করার কথা বলেছিলেন, তা তাদের ব্যক্তিগত মত এবং তারা হতাশ হয়েই বলেছিলেন। তৃণমূলের আমলে উত্তরবঙ্গে কোনো উন্নয়ন হয়নি। কিন্তু তাই বলে পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করার কোনো প্রস্তাবে দলের সায় নেই।’

প্রবীণ সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায় চৌধুরী অবশ্য মনে করেন, চাইলেই এভাবে রাজ্যভাগ করা যায় না। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ‘রাজ্য বিধানসভায় আলাদা রাজ্য করা নিয়ে প্রস্তাব পেশ করতে হয়। কাশ্মীরে বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল বলে কেন্দ্র তা ভাগ করতে পেরেছে। তাছাড়া সদ্য হেরে যাওয়া একটি রাজ্যকে বিধানসভার প্রস্তাব ছাড়া ভাগ করতে চাইলে তা আদালতে টিকবে বলে মনে হয় না।’

যে প্রশ্নটা বিরোধীরা তুলছেন, বিজেপির মতো দলে কেউ তো রাজ্যভাগের মতো দাবি, নিজের মর্জিমাফিক তুলতে পারেন না। তুললে তো শাস্তি পাওয়ার কথা। তারপরও তাদের মন্ত্রী করা হয়েছে। সে জন্যই বিতর্কটা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর