শিরোনাম
সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

কান্দাহার থেকে ভারতীয় কূটনীতিকদের ফেরত নিয়ে গেল বিমান বাহিনী

কান্দাহার থেকে ভারতীয় কূটনীতিকদের ফেরত নিয়ে গেল বিমান বাহিনী

আফগানিস্তানে তালেবান একের পর এক নতুন এলাকা দখল করে নিচ্ছে। সে দেশের ৮৫ শতাংশ এলাকার দখল নিয়ে ফেলেছে বলে দাবি করেছে তালেবানরা। ঘাঁটি শক্ত করছে লস্কর-ই-তৈয়্যবাও। এমন পরিস্থিতিতে আর ঝুঁকি নিতে চায় না ভারত। তাই কান্দাহার দূতাবাস থেকে ৫০ জন ভারতীয় কূটনীতিবিদ ও অন্য কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে গতকাল। তবে কান্দাহারের দূতাবাস বন্ধ করছে না ভারত। ভারত জানিয়েছে, কান্দাহার শহর ও তার আশপাশে নিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়াতেই শনিবার রাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত রাতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি এয়ারক্রাফট গিয়ে কান্দাহার থেকে ওই কর্মকর্তাদের তুলে নিয়ে আসে- তবে বিমানটি তার যাত্রাপথে পাকিস্তানি আকাশসীমা এড়িয়ে গিয়েছিল বলেই সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে।

আফগানিস্তানে কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারে ভারতের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় এটি একটি বড় ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। প্রায় দীর্ঘ দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে মোতায়েন থাকার পর মার্কিন সেনা খুব সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে পাকাপাকিভাবে বিদায় নিতে শুরু করেছে-আর তারপরই সে দেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানিয়েছেন, কান্দাহারে থাকা ভারতীয় দূতাবাস বন্ধ করা হচ্ছে না। তবে কান্দাহার শহরের কাছে অশান্তি বাড়ছে। সে কথা মাথায় রেখেই ভারতীয় কূটনীতিবিদ ও কর্মীদের ফিরিয়ে আনা হলো। তিনি আরও জানিয়েছেন, সাময়িক সময়ের জন্য এই পদক্ষেপ করা হলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তাদের আফগানিস্তানে পাঠানো হবে। আপাতত স্থানীয় কর্মীদের নিয়ে দূতাবাসের কাজকর্ম চলবে।

আফগানিস্তানে বেশির ভাগ এলাকা তালেবানের দখলে চলে যাওয়ার খবর প্রচারের পর দিল্লিতে নিযুক্ত আফগান রাষ্ট্রদূত ফরিদ মামুন্দজে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে তার দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বিশদে ‘ব্রিফ’ করেন। এরপরও কাবুলে ভারতের দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ সপ্তাহেই জানানো হয়েছিল, তাদের দূতাবাস বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। কান্দাহার ও মাজার-ই-শরিফের ভারতীয় দূতাবাসও চালু থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার থেকেই কান্দাহারের নিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে বলে খবর আসতে শুরু করে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর পাওয়া যায়, শত শত তালেবান যোদ্ধা কান্দাহারের সীমানায় জড়ো হতে শুরু করেছে। এমনকি শহরের ভিতর থেকেও বহু সশস্ত্র মানুষ তাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে এবং কোনো কোনো এলাকায় তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত সিদ্ধান্ত নেয়, কোনো ঝুঁকি না নিয়ে কান্দাহার থেকে সব কূটনৈতিক কর্মকর্তাকে অবিলম্বে ভারতে ফিরিয়ে আনা হবে। সেই অনুযায়ী শনিবার রাতেই সেখানে পাঠানো হয় ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের একটি বিমান, সেটি কান্দাহারে নিযুক্ত সব ভারতীয় কর্মকর্তাকে গভীর রাতে দিল্লিতে নিয়ে আসে।

এ দিন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সেখানকার পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির দিকে আমরা প্রতিনিয়ত নজর রাখছি।’

তবে আফগানিস্তানে নিযুক্ত ভারতের একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত রবিবার বিবিসিকে বলেছেন, ভারত যে বহুদিন ধরেই সে দেশে পায়ের তলায় শক্ত জমি চাইছে  কান্দাহার থেকে কর্মকর্তাদের সরিয়ে আসার পদক্ষেপে তা অবশ্যই হোঁচট খাবে। যে তালেবান এখন কার্যত আফগানিস্তানের দখল নিতে চলেছে, তাদের সঙ্গে ভারতের ‘ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ’ বা কাজ চালানোর মতো সম্পর্ক রাখাও যে বেশ কঠিন, তা এ ঘটনায় স্পষ্ট- বলছেন ওই সাবেক কূটনীতিবিদ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর