বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যাপক লুটতরাজ, বাড়ছে মৃত্যু

♦ গতকাল পর্যন্ত ৭২ জন নিহত ♦ সেনা মোতায়েনের পরও বিক্ষোভ অব্যাহত

দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যাপক লুটতরাজ, বাড়ছে মৃত্যু

দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলার সময় শপিং মল ও দোকানপাটে লুটতরাজ চালানো হয় -এএফপি

দক্ষিণ আফ্রিকার বিক্ষোভ ক্রমে ছড়িয়ে পড়ছে। সেনা  রাস্তায় নামলেও বিক্ষোভ বন্ধ হচ্ছে না। জায়গায়  জায়গায় লুট হচ্ছে দোকান, শপিং মল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এমনকি ওয়্যারহাউস। এখনো পর্যন্ত ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে গ্রেফতার করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান প্রশাসন। তার বিরুদ্ধে   দুর্নীতির অভিযোগ আছে। আদালত জুমাকে একটি দুর্নীতিবিরোধী কমিটির সামনে বসতে বলেছিল। কিন্তু জুমা সেখানে যাননি। এরপরই আদালত অবমাননার  দায়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। নিম্ন আদালত তাকে    ১৫ মাস জেলে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।

নিহতদের মধ্যে মঙ্গলবার ১০ জন পদদলিত হয়ে মারা যায়। ওই দিন রাতে সোয়েতোর একটি শপিং সেন্টারে লুটপাটের সময় এ ঘটনা ঘটে। বিবিসির ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, ডারবানে একটি ভবনের নিচতলার    দোকানে লুটপাটের পর তাতে আগুন লেগে গেলে এক নারী নিজের সন্তানকে বাঁচাতে তাকে নিচে ছুড়ে দেন। স্থানীয়রা বাচ্চাটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। গত সপ্তাহে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর পুলিশকে সহায়তা করতে বর্তমানে সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ জানিয়েছে, তারা ১২ সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করেছেন যারা দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছেন। এ ছাড়া সব মিলিয়ে ১ হাজার ২৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ শেষ হওয়ার আগে ১৯৯০-এর দশকের পর তিনি এ ধরনের জঘন্য সহিংসতা দেখেননি। এতে আগুন দেওয়া হয়েছে, মহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বড় বড় শহরের পাশাপাশি কয়াজুলু-নাটাল এবং গাওটেং মতো ছোট ছোট প্রদেশের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং গুদামে লুটপাট চালানো হয়েছে। মন্ত্রীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে এভাবে লুটপাট চলতে থাকলে ওইসব এলাকায় শিগগিরই প্রধান খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেবে। কিন্তু তারা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে অসম্মতি জানিয়েছেন।

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি : মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত আড়াই শতাধিক শপিং মলে লুটপাট চালানো হয়েছে। দেশটির ব্যবসায়ী নেতা বুসিসিয়ে মাভুসোর বরাত দিয়ে এমন  তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ। দক্ষিণ    আফ্রিকার সবচেয়ে বড় শহরাঞ্চল সোয়েতোতে বেশ কিছু শপিং সেন্টার পুরোপুরি লুটে নেওয়া হয়েছে। এই শহরটিতেই নেলসন ম্যান্ডেলার বাড়ি ছিল। শহরটির এটিএমগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে, রেস্তোরাঁ, অ্যালকোহল ও কাপড়ের দোকান সবকিছু ভেঙেচুরে ফেলা হয়েছে।

পুলিশের সঙ্গে মিলে সেনারা কিছু দাঙ্গাকারীকে গ্রেফতার করেছে। সব মিলিয়ে ৮০০ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা দাঙ্গাকারীদের তুলনায় এখনো নগণ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার টাইমসলাইভ নিউজ সাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়াজুলু-নাটাল শহরে গবাদিপশুও চুরি করা হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সগুলোর ওপরও হামলা চালিয়েছে দাঙ্গাকারীরা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দীর্ঘ লকডাউনে হতাশ দেশের একটি অংশের মানুষ। তারা কাজ হারিয়েছেন। অন্যদিকে মূলবৃদ্ধি অব্যাহত। সব মিলিয়ে মানুষের ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বাড়ছিল। বিক্ষোভে সেই বিষয়টিই সামনে চলে এসেছে।

জুমা কেন কারাগারে : গত মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের শাসনামলে দুর্নীতির তদন্তে অংশ নিতে না পারায় আদালত অবমাননার দায়ে তাকে দন্ডিত করা হয়। ৭৯ বছর বয়সী এই নেতা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তাকে ১৫ মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়। স্থানীয় সময় বুধবার বিকালে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। তার কারাদন্ড সাংবিধানিক আদালত বাতিল কিংবা কমিয়ে  দেবে বলে আশা করছেন তিনি। তবে আইনজ্ঞরা বলছেন যে, এ সম্ভাবনা খুবই কম।

সরকারের বক্তব্য : সরকার জানিয়েছে কড়া হাতে বিক্ষোভের মোকাবিলা করা হচ্ছে। কভিডে এমনিতেই অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। মাঝে তা খানিকটা চাঙা করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু যেভাবে দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীরা লুটপাট চালাচ্ছে এবং সম্পত্তি নষ্ট করছে, তাতে অর্থনীতির বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। বহু সময় লাগবে তা ঠিক করতে।

সর্বশেষ খবর