বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

গাদ্দাফিপুত্র সাইফ কি লিবিয়ার রাজনীতিতে ফিরছেন?

গাদ্দাফিপুত্র সাইফ কি লিবিয়ার রাজনীতিতে ফিরছেন?

সাইফ আল ইসলাম গাদ্দাফি

লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি। যিনি নিজেকে গোটা আফ্রিকার নেতা পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। কিন্তু আরব বসন্তের আগুনে জ্বলে যান তিনি। প্রথমে সশস্ত্র বিদ্রোহ তার পর আমেরিকা, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের বিমান হামলার মুখে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে ২০১১ সালে নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছিলেন। তবে তার সময়ে লিবিয়া ছিল আরাম-আয়েশের এক উদাহরণের দেশ। গাদ্দাফির সময়ে তার যে ছেলেকে বাবার উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হতো, সেই সাইফ আল ইসলাম গাদ্দাফি প্রাণে বেঁচে গেছেন। পশ্চিমা বিমান হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় কজন সঙ্গী নিয়ে পাশের দেশ নিজারে পালিয়ে যাওয়ার সময় সীমান্তে মরুশহর আওবারি থেকে একদল সশস্ত্র বিদ্রোহীর হাতে ধরা পড়েন তিনি। তখন থেকেই তিনি ‘জিনতান ব্রিগেড’ নামের ওই মিলিশিয়া গোষ্ঠীর কবজায়।

এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হয়েছে। ২০১৫ সালে ত্রিপোলির আদালতে তার মৃত্যুদন্ডও হয়েছে। কিন্তু জিনতান ব্রিগেড কারও কাছেই তাকে হস্তান্তর করেনি। ২০১৪ সালের পর গত সাত বছর সাইফ গাদ্দাফির কোনো খোঁজ কেউ পায়নি। তিনি বেঁচে আছেন কি নেই, তা লিবিয়ানদের কাছে তো বটেই বাকি বিশ্বের অনেকের কাছেও অনিশ্চিত ছিল। কিন্তু গত শুক্রবার  যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের সাপ্তাহিক সাময়িকীতে ছবিসহ সাইফ আল ইসলামের বিশাল একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর থেকে তা নিয়ে লিবিয়া এবং আরব বিশ্বে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সাংবাদিক এবং লেখক রবার্ট এফ ওয়ার্থকে সাইফ ইসলাম বলেন, গত ১০ বছরে লিবিয়া ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে এবং মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে বাঁচাতে তিনি তার বাবার তৈরি রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম ‘গ্রিন মুভমেন্ট’ পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করেছেন। তার কথা ছিল, ‘আমি আমার দেশ ফেরত চাই।’

সাক্ষাৎকারে সাইফ আল গাদ্দাফি বলেন, ‘তারা আমার দেশকে ধর্ষণ করেছে। জীবনের কোনো স্পন্দন নেই। আপনি গ্যাস স্টেশনে যান, সেখানে ডিজেল নেই। অথচ আমরা ইতালিতে তেল-গ্যাস রপ্তানি করি। ইতালির অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় আমাদের তেল-গ্যাসে। কিন্তু আমার দেশে লোডশেডিং।’

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাংবাদিক ওয়ার্থ লিখেছেন, গত আড়াই বছর ধরে নানা সূত্রে খোঁজখবর এবং যোগাযোগ করে সাইফ আল ইসলামের খোঁজ পান তিনি। ত্রিপোলি থেকে গোপনে কয়েকবার গাড়ি বদল করে তিনি লিবিয়ার জিনতানের মরুভূমির ভিতর প্রত্যন্ত এক পাহাড়ি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক বাড়ির কার্পেট মোড়া, ঝাড়বাতি ঝোলানো এক ঘরে মুখোমুখি বসে তাদের কথা হয়।

২০১১ সালের আগে সাইফ গাদ্দাফি ছিলেন লন্ডন অব ইকোনমিকসে পড়াশোনা করা চকচকে স্মার্ট এক যুবক। চোখে থাকত রিম ছাড়া ডিজাইনার চশমা, কেতাদুরস্ত পশ্চিমা পোশাক। কিন্তু সাংবাদিক রবার্ট ওয়ার্থের সামনে বসা সেই সাইফের মুখে ছিল লম্বা দাড়ি। মাথায় পাগড়ি। পরনে উপসাগরীয় আরব শেখদের মতো লম্বা জোব্বা। ডানহাতের বুড়ো আঙুল এবং তর্জনী নেই- ২০১১ সালে ন্যাটো বোমা হামলায় জখমের পরিণতি। আপনি কি এখনো বন্দী?- সাংবাদিকের এই প্রশ্নে সাইফ আল ইসলামের জবাব ছিল, ‘আমি মুক্ত এবং রাজনীতিতে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ তিনি বলেন, যে বিদ্রোহীরা তাকে বন্দী করে রেখেছিলেন, এখন তারাই তার প্রধান মিত্র। ‘ভেবে দেখুন, যারা এক সময় আমাকে পাহারা দিত, তারাই আমার বন্ধু।’

সর্বশেষ খবর