বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে তালেবান হামলা

আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে তালেবান হামলা

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বন্দুকধারী বিদ্রোহীরা। এতে কমপক্ষে আটজন নিহত হয়েছেন। প্রায় এক বছরের মধ্যে এই প্রথম বন্দুকধারী বিদ্রোহীরা কাবুলে এত বড় বোমা হামলা চালাল। তালেবানের দাবি তারা এ হামলা চালিয়েছে। অবশ্য মঙ্গলবার রাতে এ হামলার সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ খান মোহাম্মদি বাড়ি ছিলেন না। তার বাড়িটি দেশটির এমন জায়গায় যাকে বলা হয় গ্রিন জোন। এলাকাটি অত্যন্ত সুরক্ষিত। তালেবানরা গাড়িবোমা ফাটিয়ে ও গুলি চালিয়ে পুরো এলাকা তটস্থ করে রাখে।

গতকাল দেওয়া বিবৃতিতে তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।’ ভবিষ্যতেও আফগানিস্তান সরকারের বিভিন্ন নেতাদের বিরুদ্ধে এমন হামলা চালানো হবে বলে হুমকি দেন তিনি। কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং হামলাকারী চার বন্দুকধারীকে হত্যা করা হয়েছে।

আফগানিস্তানে সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে আত্মঘাতী বোমা হামলা হিসেবে উল্লেখ করেছে। হামলার পর সেখানে তিন ঘণ্টার বেশি বন্দুকযুদ্ধ চলে বলে জানা গেছে। হামলার পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদি এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘চিন্তার কিছু নেই, সবকিছু ঠিক আছে।’

একই চিত্র দেখা গেছে হেরাত শহরে, সোমবার, যেখানে তালেবান যোদ্ধা ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। কাবুল থেকে বিবিসির সংবাদদাতা সেকান্দার কেরমানি বলছেন, জনগণের মধ্যে তালেবান প্রতিরোধের এ মনোভাব আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবলকে চাঙা করছে। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে বিদ্রোহীরা দেখিয়ে দিয়েছে তারা সরকারের একেবারে কেন্দ্রেও হামলা চালাতে সক্ষম।

অন্যান্য শহরের অবস্থা : দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লশকর গা শহরে তালেবান যোদ্ধাদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর তীব্র লড়াই অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ বলেছে, যুদ্ধে অন্তত ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। একজন বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, ‘রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে আছে। আমরা জানি না এগুলো বেসামরিক নাগরিকের নাকি তালেবানের।’ তিনি তার নাম প্রকাশ করতে চাননি।

‘বহু পরিবার তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে হেলমান্দ নদীর কাছে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।’ আফগান সেনাবাহিনী বলছে, তারা তালেবানের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আক্রমণ শুরু করতে যাচ্ছে এবং এজন্য লোকজনকে শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার অনুরোধ করেছে। খবরে বলা হচ্ছে, তালেবান যোদ্ধারা বিভিন্ন বাড়ি, দোকানপাট ও বাজারে আশ্রয় নিয়েছে। দেশের দক্ষিণে কান্দাহার দখলের জন্যও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তালেবান। পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতেও তীব্র সংঘর্ষ চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের চূড়ান্ত পর্যায়ে সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর থেকে আফগানিস্তানে তালেবানের হামলা বেড়েছে। এতে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের লড়াইও তীব্র হয়েছে। গোষ্ঠীটি এ পর্যন্ত ২২৩ জেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এ ছাড়া ১১৬ জেলায় লড়াই চলছে।

ক্ষমতার সিংহভাগ চায় তালেবান : যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আলোচনা চলছে দেশটির সরকার ও জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবানের মধ্যে। কাতারের রাজধানী দোহায় দুই পক্ষের আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তালেবান সম্প্রতি ক্ষমতার সিংহভাগ দাবি করায় সরকারপক্ষের সঙ্গে তাদের ব্যাপক দূরত্ব তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জালমে খালিকজাদ এ কথা জানান। অনলাইন কনফারেন্সে অ্যাসপেন সিকিউরিটি ফোরামকে খালিকজাদ বলেন, এ মুহূর্তে তারা (তালেবান) সামরিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলছে এবং দেশটির পরবর্তী সরকারে ক্ষমতার সিংহভাগ নেওয়ার দাবি করছে। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক বিবৃতিতে বলেন, তালেবানের ক্রমবর্ধমান হামলা এ আশঙ্কা জাগিয়েছে যে তারা ২০০১ সালের আগে আফগানিস্তানে যে কট্টর ইসলামী শাসন কায়েম করেছিল, তার পুনর্বাস্তবায়ন ঘটাতে চায়। প্রাইস সাংবাদিকদের বলেন, ‘তালেবান যদি আলোচনার বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে তাহলে তারা আন্তর্জাতিকভাবে একা হয়ে পড়বে এবং এর ফল হবে দেশটিতে ফের গৃহযুদ্ধের সূচনা। আমরা এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। তা কখনই কারও প্রত্যাশিত হবে না।’

সর্বশেষ খবর