শনিবার, ৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
এই প্রথম একটি প্রাদেশিক রাজধানী তালেবান গোষ্ঠীর দখলে

প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নিল তালেবান

সরকারের মিডিয়া প্রধানকে হত্যা

গৃহযুদ্ধে রক্তাক্ত আফগানিস্তান। ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে চলছে হত্যাযজ্ঞও। এর মধ্যে দেশটির প্রাদেশিক একটি রাজধানী দখল করে নিয়েছে তালেবান। দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী জারাঞ্জ তালেবানের দখলে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক মুখপাত্র। তিনি জানান, সরকারের কাছ থেকে যথেষ্ট লোকবল না পাওয়ার কারণে জারাঞ্জের পতন হয়েছে।

এদিকে গতকাল আফগান সরকারের সংবাদমাধ্যম বিভাগের প্রধান দাওয়া খান মেলাপালকে হত্যা করেছে তালেবান। বিকালে রাজধানী কাবুলের দারুল আমান সড়কে বন্দুকধারীরা তাকে হত্যা করে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পত্রিকা টোলো নিউজ। মেনাপাল নিয়মিত আফগান সরকারের অবস্থান নিয়ে টুইট করতেন। টুইটারে তার অনুসারী ছিল ১ লাখ ৪২ হাজার জনের বেশি। যুক্তরাষ্ট্র গত বছর মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করার পর আফগানিস্তানের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে এই প্রথম একটি প্রাদেশিক রাজধানী তালেবান উগ্র গোষ্ঠীর দখলে এলো।

স্থানীয় এক আফগান কর্মকর্তা বলেছেন, তালেবান যোদ্ধারা প্রাদেশিক গভর্নরের কার্যালয়, পুলিশ সদর দফতর এবং ইরান সীমান্তের কাছে একটি ছাউনি দখলে নিয়েছে। ওদিকে, তালেবানের পক্ষ থেকে জয় উদযাপনের কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, জারাঞ্জ দখলে চলে আসায় অন্যান্য প্রদেশের লড়াইয়েও জয় পেতে যোদ্ধাদের মনোবল বেড়ে যাবে।

অন্যদিকে আফগান সরকারের অন্যতম পরিচিত মুখ দাওয়া খান মেলাপালের হত্যার খবর প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কাবুলে। তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদের বক্তব্য, ‘একটি হামলায় তাকে খতম করেছে মুজাহিদরা।’ বলে রাখা ভালো, বিমান হানার পাল্টা সরকারি নেতা ও আমলাদের নিশানা করার হুমকি দিয়েছিল তালেবান। ফলে হামলার ভয় ছিলই। এবার সে আশঙ্কা বাস্তবে পরিণত হলো। এ বিষয়ে আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মিরওয়াইস স্তানিকজাই বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত বর্বর জঙ্গিরা এক দেশভক্ত আফগানকে হত্যা করেছে।’

গত ২৪ ঘণ্টায় হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লশকরগাহে প্রচন্ড বোমাবর্ষণ করে আফগান বিমান বাহিনী। ওই হামলায় ৯০ তালেবান ও আলকায়েদা জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে।

বিবিসি জানায়, আফগানিস্তানে সহিংসতায় অবনতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গতকাল এক উন্মুক্ত বৈঠক ডেকেছে। আফগান কর্মকর্তারাই এ বৈঠক অনুষ্ঠানের অনুরোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন কূটনীতিকরা। প্রতিবেশী দেশগুলোও আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে গতকালই আলোচনায় বসার কথা। কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও উজবেকিস্তান বার্ষিক আলোচনার জন্য তুর্কেমেনিস্তানে কূটনীতিক পাঠিয়েছে। তুর্কেমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট গত বুধবার এক টিভি সম্প্রচারে আফগান পরিস্থিতি সবার জন্যই উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছিলেন।

আফগানিস্তানে দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর থেকেই দেশটিতে সংঘাত বেড়েছে। আফগান বাহিনীর হাত থেকে একের পর এক অঞ্চল দখল করে নিচ্ছে তালেবান।

তালেবান জঙ্গিরা এরই মধ্যে দেশের অনেক এলাকা দখল করে নিয়েছে। এখন তারা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে। দক্ষিণের কান্দাহারসহ অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হেরাত ও হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লশকরগাহতে তালেবান হামলা চালাচ্ছে। হেলমান্দ ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সামরিক অভিযানের কেন্দ্রস্থল। এ প্রদেশের লড়াইয়ে তালেবান জয়ী হলে তা হবে আফগান সরকারের জন্য এক বড় ধাক্কা। লশকরগাহের পতন হলে ২০১৬ সালের পর এটিই হবে তালেবানের প্রথম কোনো প্রাদেশিক রাজধানী জয়।

সর্বশেষ খবর