বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
নাসার হুঁশিয়ারি

পানিতে তলিয়ে যাবে ভারতের ১২ শহর

বিজ্ঞানীরা যা বলছেন তা ঘটেই চলছে। প্রকৃতি ও জলবায়ুকে প্রাধান্য দিতে বিশ্ব নেতাদের কাছে বারংবার আহ্বান জানাচ্ছে। এরমধ্যে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা সতর্ক করে দিল ভারতকে। সংস্থাটি বলছে, এই শতকের শেষে মুম্বাই, চেন্নাই, কোচিসহ ভারতের ১২টি শহর প্রায় তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাবে। রিপোর্ট দিয়েছে ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)। আর নাসা তার বিশ্লেষণ করেছে। তারপর নাসা যে সিদ্ধান্তে এসেছে, তা ভারতের পক্ষে রীতিমতো চিন্তার কারণ। দেশের ১২টি উপকূলীয় শহর ও বন্দর এক থেকে তিন ফুট পানির তলায় চলে যাবে। এই শহরগুলোর মধ্যে আছে বাণিজ্য রাজধানী মুম্বাই, দক্ষিণ ভারতের অন্যতম প্রধান শহর চেন্নাই। তাছাড়া কেরালার কোচি, অন্ধ্রের বিশাখপত্তনম এবং পশ্চিমবঙ্গের খিদিরপুর এই তালিকায় আছে। বিশ্বে পরিবেশ দূষণ, উষ্ণায়নসহ বিভিন্ন কারণে সমুদ্রের পানিস্তর বাড়ছে। এশিয়ায় পানিস্তর বৃদ্ধির পরিমাণ অন্য জায়গার তুলনায় বেশি। আইপিসিসি-র মতে, আগে ১০০ বছরে যে পরিবর্তন হতো, ২০৫০-এর মধ্যে প্রতি ছয় থেকে নয় বছরে তা হবে। এই শতাব্দী জুড়ে উপকূলে পানিস্তর বাড়বে, ভাঙন দেখা দেবে, অনেক শহর জলের তলায় চলে যাবে। এককথায় পরিস্থিতি বড় সুখের নয়।

পরিস্থিতি কতটা খারাপ তা বোঝাতে একটা উদাহরণ যথেষ্ট। শিল্পবিপ্লবের সময় কার্বন নিঃসরণের যে পরিমাণ ছিল, এখন তা দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে মানুষকে বাঁচতে গেলে, বিশ্বকে বাঁচাতে হলে প্রতিটি ব্যক্তিকে উদ্যোগী হতে হবে। ভারতে দীর্ঘদিন সরকারি পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন অমিতাভ রায়। পরিকল্পনা কমিশনের অবসরপ্রাপ্ত এই কর্তার মতে, ‘আমরা প্রায়ই শপথ নিই যে, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে ফেলব, বাস্তবে তা হয় না। খাতায়-কলমে অনেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়, আমরা অনেক প্রতিজ্ঞা করি, অনেক চুক্তিতে সই করি, বাস্তবে তার প্রয়োগ করা হয় না বলেই আইপিসিসি যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা সত্যি হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’

অমিতাভ জানিয়েছেন, ‘এর আগে জাতিসংঘ সব দেশের জন্য মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বেঁধে দিয়েছিল। ২০০০ থেকে ২০১৫-র মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হতো। তাতে ১৫ দফা বিষয় ঠিক করা হয়ছিল। ২০১৫ সালে মূল্যায়নের সময় দেখা গেল, তার রূপায়ণ হয়নি।’ অমিতাভ বলেছেন, ‘এরপর ২০১৫ থেকে ২০৩০-এর মধ্যে সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল ঠিক করল জাতিসংঘ। সেটাও পূরণ হবে এমন আশা কম। তখন হয়তো আবার ১৫ বছরর জন্য অন্য নামে কোনো লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করা হবে। জলবায়ু পরিবর্ত রোধ করার কাজটাও এভাবেই হচ্ছে।’ ফলে পরিস্থিতি খুব সুখের নয়। আইপিসিসি রিপোর্ট বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আঞ্চলিক স্তরেও নানা পরিবর্তন হতে পারে। বৃষ্টি বেশি হবে, আবার কোথাও বৃষ্টি হবে না। খরা দেখা দেবে। কোথাও প্রচুর বরফ পড়তে পারে। ২০০৬-১৮ সালের মধ্যে সমুদ্রের জলস্তর নিয়ে যে সমীক্ষা করা হয়েছে তাতে দেখা গিয়েছে, গোটা বিশ্বে প্রতি বছর জলস্তরের গড় বৃদ্ধি হয়েছে ৩.৭ মিলিমিটার। ফলে এখন থেকেই সতর্ক হয়ে পরিবর্তন রোধ করার চেষ্টা না করলে ভবিষ্যৎ ভয়ংকর হতে বাধ্য।

সর্বশেষ খবর