মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

খরচ দুই ট্রিলিয়ন ডলার আমেরিকার প্রাপ্তি শূন্য!

তালেবানের ঝটিকা দখল অভিযানের মুখে আফগান সেনাবাহিনী মুখ থুবড়ে পড়ে

খরচ দুই ট্রিলিয়ন ডলার আমেরিকার প্রাপ্তি শূন্য!

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল এখন তালেবানের দখলে। গতকাল মোটরসাইকেলে টহল দিচ্ছেন দুই তালেবান যোদ্ধা- এএফপি

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। আমেরিকান এয়ারলাইনসের বিমান হাইজ্যাক করে আল-কায়েদা জঙ্গিরা। সেই বিমান নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বহুতলে আঘাত করে। বিমানের জ্বালানির তাপে ভবনটি গলে হুড়মুড়িয়ে পড়ে যায়। ভয়াবহ ওই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল মোট ২৯৯৬ জনের। মার্কিন মুল্লুকের ইতিহাসে এত বড় জঙ্গি হানা ছিল সেই প্রথম। নড়েচড়ে বসে তৎকালীন জর্জ বুশ প্রশাসন। নেওয়া হয় এক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। আল-কায়েদা এবং তালেবান জঙ্গিদের ধ্বংস করার নীলনকশা তৈরি হয়। জঙ্গিদের ঘাঁটি আফগানিস্তানে পাড়ি দেয় মার্কিন সেনা। শুরু হয় জঙ্গি দমন। কিন্তু এত করেও কি কোনো লাভ হলো? সেই তো ‘ব্যর্থ’ হয়েই ফিরতে হচ্ছে মার্কিন সেনাকে।

এক মাসের অভিযানে রবিবার আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে তালেবানরা। অথচ ২০ বছর ধরে তাদের দমিয়ে রাখতে আফগান সেনাকে সাহায্য করে গেছে মার্কিন সেনা। এই দুই দশকে মিলিয়ন-বিলিয়ন নয়, ২ ট্রিলিয়ন (১ কোটি ৭০ লাখ কোটি টাকা)। কাবুলিওয়ালাদের দেশে প্রাণ দিয়েছেন প্রায় ২৫০০ মার্কিন সেনা। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল সেই ‘শূন্য’। জর্জ বুশ থেকে ওবামা এবং ট্রাম্প হয়ে অধুনা বাইডেন, প্রত্যেক প্রেসিডেন্টের ‘টু ডু’ লিস্টে ছিল আফগানিস্তানে জঙ্গি দমন। কিন্তু তালেবান দখল তো হলোই না। বাধ্য হয়ে ট্রাম্পের আমলে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তালেবানদের সঙ্গে চুক্তি হয় আমেরিকার। সেনা প্রত্যাহার করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাইডেন ক্ষমতায় এসে বলেছেন তিনি আফগানিস্তানে কোনো মার্কিন সৈন্যই রাখবেন না। বরং একটি সুগঠিত আফগান সেনাবাহিনী তৈরি করেছেন তারাই আফগানিস্তান সুরক্ষা করবে। অথচ কী ঘটল। তালেবানের হাতে একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানীর পতন। তারপর অনেকটা বিনা বাধায় আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশ। তালেবানের এই ঝটিকা দখল অভিযানের মুখে আফগান সেনাবাহিনী মুখ থুবড়ে পড়ে। দুই দশক ধরে আফগান সেনাবাহিনী গড়তে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের চেষ্টা যে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে, এই ঘটনায় তা স্পষ্ট। গতকাল বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঠিক যেদিন থেকে সেনা ফিরতে শুরু করে, সেদিন থেকেই ধীরে ধীরে স্বমূর্তি ধরে তালেবানরা। শুরু হয় একের পর এক সেনাঘাঁটি দখল। তারপর শুরু হলো শহর দখল। হেরাত, গজনি, জালালাবাদ হয়ে শেষে রাজধানী কাবুলে ঢুকে পড়ে ক্ষমতা দখল করে নিল তারা। আমেরিকার এত বছরের অর্থ ব্যয়, শ্রম ব্যয় সব বিফলেই গেল। অর্থ, শ্রম না হয় মেনে নেওয়া গেল, কিন্তু মার্কিন অহং যেভাবে ধাক্কা খেল, তা অভূতপূর্ব।

তবে আফগান সেনাবাহিনীর এই অবস্থাকে অন্য ভাবে দেখছে মার্কিন সেনা বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছে, নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। সেই প্রসঙ্গে টেনে অপর এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনি কি আপনার নেতাদের জন্য জীবন দেবেন, যাঁরা আপনাকে সময়মতো বেতন দেন না?’ গজনি প্রদেশে তালেবানের এক কমান্ডার বলেন, যখনই মার্কিন বাহিনীর প্রত্যাহার শুরু হয়, তখনই আফগান সরকারি বাহিনী ভেঙে পড়া শুরু হয়।

এই বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে কোনো আদর্শ ছিল না। সাবেক মার্কিন কূটনীতিক রিচার্ডের ভাষ্য, আফগান বাহিনী যুদ্ধ করেছে। তারা যুদ্ধ করতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আফগান সেনাবাহিনী যে সরকারের জন্য লড়াই করবে, তারা কি তার যোগ্য?

সর্বশেষ খবর