রবিবার, ২২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
সোনিয়া-মমতা বৈঠক

বিজেপি ঠেকাতে কোর কমিটি গঠনের প্রস্তাব

কলকাতা প্রতিনিধি

বিজেপি ঠেকাতে কোর কমিটি গঠনের প্রস্তাব

একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করে পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বারের জন্য সরকারে এসেছে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। এবার তাঁর লক্ষ্য ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন। কেন্দ্রে বিজেপি সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে বিরোধী শক্তিকে আরও শক্তিশালী করতে ও নিজেদের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে ‘কোর কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দিলেন মমতা।

শুক্রবার কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের বৈঠকে এ প্রস্তাব রাখেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। ভার্চুয়াল বৈঠকে মমতা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সিনিয়র কংগ্রেস নেতা মনমোহন সিং, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এম কে অ্যান্টনি ও মল্লিকার্জুন খাড়গে, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ও ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিন, ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী ও জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেন, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ও শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে, এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, লোকতান্ত্রিক জনতা দল নেতা শারদ যাদব, জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স সভাপতি ফারুক আবদুল্লাহ, পিডিপি সভানেত্রী মেহবুবা মুফতি, সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই নেতা ডি. রাজাসহ ১৯টি অবিজেপি দলের শীর্ষ নেতারা। যদিও সোনিয়ার ডাকা বৈঠকে গরহাজির ছিলেন সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজবাদী পার্টির নেতারা।

ওই বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর অভিমত, বিরোধী দলগুলোর পৃথক রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকবে। তা সত্ত্বেও নিজেদের মধ্যকার ছোটখাটো বিরোধিতা, অহংবোধ দূরে সরিয়ে রেখে ঐক্যবদ্ধ জোট করতেই হবে এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজোট হয়ে দ্রুততার সঙ্গে শামিল হতে হবে। সংসদের ভিতর ও বাইরে একযোগে এ আন্দোলন চলার কথাও জানান তিনি।

 

 

মমতার অভিমত, একাধিক সমস্যার দিকে না তাকিয়ে বিরোধীদের উচিত মূল পাঁচটি দাবিতে লক্ষ্যপাত করা। এগুলো হলো- সবার জন্য করোনা টিকা, কৃষি বিল প্রত্যাহার, পেট্রোল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের দাম কমানো, দেশের গরিব পরিবারগুলোকে মাসে ৭ হাজার ৫০০ রুপি করে প্রদান এবং পেগাসাস ফোন ট্যাপিং ইস্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা।

সোনিয়ার ডাকা বৈঠকে যেখানে বিরোধী দলগুলোর তরফে একটি যৌথ বিবৃতি পেশ করা হয় সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে আলাদা করে আরেকটি বিবৃতি পেশ করা হয় যাতে মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। তাঁর লক্ষ্য একটাই- বিরোধী জোটকে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া।

মমতা এদিন এও বলেন, ‘বিজেপিবিরোধী লড়াইয়ে কাউকে অচ্ছুত রাখা যাবে না। সব বিরোধী দলকে একমঞ্চে আনতে হবে। এমনকি যারা কংগ্রেসের সঙ্গে নেই তাদেরও বিরোধী দলের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে।’ জোটের নেতৃত্ব নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘আমাদের ভুলে যেতে হবে যে কে নেতা। আমাদের নিজেদের স্বার্থগুলো সরিয়ে রাখতে হবে। দেশের মানুষই নেতৃত্ব দেবে। একটা কোর কমিটি করে একসঙ্গে কাজ করা হোক।’

অন্যদিকে সোনিয়া গান্ধীও বলেন, ‘আমাদের সবার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এটাই সময়, যখন দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে তার ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। এখন থেকে আমাদের একটাই লক্ষ্য- এমন সরকার গঠন হবে যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের নীতি ও সংবিধানের মূল্যবোধগুলো পাথেয় করে চলবে।’

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও বিরোধী দলগুলোকে একত্রিত করার একটা প্রয়াস নিতে দেখা গিয়েছিল মমতা ব্যানার্জিকে। বিরোধী দলনেতাদের নিয়ে ওই বছরের জানুয়ারিতে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে একটি বিশাল জনসভারও আয়োজন করেছিলেন মমতা। কিন্তু নিজেদের স্বার্থের দিকে তাকিয়েই শেষ পর্যন্ত বিরোধী জোট গঠনে সফলতা আসেনি, প্রতিটি রাজনৈতিক দলই আলাদা করে নির্বাচনের ময়দানে লড়াইয়ে নেমেছিল। আর বিরোধী জোট তৈরি না হওয়ায় নির্বাচনে আরও বেশি মাত্রায় জনসমর্থন নিয়ে দ্বিতীবারের জন্য কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার।

সর্বশেষ খবর