সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

তালেবানের আফগানিস্তান দখলের এক সপ্তাহ

♦ অফিস আদালত বন্ধ ♦ জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে

তালেবানের আফগানিস্তান দখলের এক সপ্তাহ

আছে ভয়, সংশয়। তারপরও দেশে ফেরার আকুতি। কারণ আফগানিস্তান এখন তালেবানের দখলে। গতকাল পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের চামান সীমানা দিয়ে বহুদিন বিতাড়িত আফগান নাগরিকরা দেশে ফিরছেন -এএফপি

রবিবার থেকে রবিবার। এক সপ্তাহ হলো আফগানিস্তান দখল করেছে তালেবান। তবে তারা এখনো সরকার গঠন করেনি। ফলে দেশটি এখন সরকারবিহীন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি নিয়ে গোটা বিশ্বেই এখন উদ্বেগ। আফগান নাগরিকদের মধ্যে তালেবানের আতঙ্ক যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বাঁচার তাগিদ। কেউ বিমানবন্দরে বসে অপেক্ষা করছেন বাঁচার একটি সুযোগের। কেউ আবার বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কাজে ফিরতে চান। তবে পরিস্থিতি সে ক্ষেত্রেও সহায় নয়। এখনো বন্ধ কাবুলের সরকারি ও বেসরকারি অফিস। ব্যাংক এবং পাসপোর্ট অফিস বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন আফগান মুলুকের বাসিন্দারা। শনিবার শয়ে শয়ে মানুষ সরকারি অফিসের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু সব কিছু বন্ধ থাকায় বিশাল সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁদের। স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমকে কাবুলের এক বাসিন্দা বলেন, ‘গনি সরকার থাকাকালীন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলাম। ২৫ দিন হয়ে গেছে। এখনো আমার পাসপোর্ট আসেনি। তারপর তালেবান কাবুল দখল করল। সাত দিন হয়ে গেছে। এখনো পাসপোর্ট পেলাম না’।

এদিকে পাসপোর্ট অফিসের এক কর্মী বলেন, ‘তালেবান সংগঠনের তরফ থেকে বলা হয়েছিল সরকারি চাকুরেরা যেন শনিবার থেকে অফিসে আসেন এবং তাঁদের কাজ শুরু করেন। সেই নির্দেশ মেনে আমি অফিসে এসেছিলাম। কিন্তু দফতরে অন্য কোনো কর্মচারী নেই। তাই ফিরে যাচ্ছি’। কাবুলের বাসিন্দারা চাইছেন অন্তত সরকারি অফিস দ্রুত খুলুক। এতে দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে সুবিধা হবে। এক বাসিন্দার কথায়, সবাই নিজের বাড়িতে বসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। আর তালেবান আমাদের কাজকর্ম শুরু করতে বলছে। জরুরি দফতর না খুললে, কাজ শুরু করব কীভাবে? পাসপোর্ট দফতরের আরও এক কর্মী নইদ পায়কানের কথায়, ‘আমরা বিভাগীয় বৈঠক করেছি। অফিসেও গিয়েছিলাম। তবে এখনই কাজকর্ম শুরু হচ্ছে না’। এদিকে দিনে দিনে দেশটিতে সব ধরনের পণ্য হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। ফলে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

নতুন তালেবান সরকারের ফ্রেমওয়ার্ক ঘোষণা শিগগিরই : আফগানিস্তানে নতুন সরকারের ফ্রেমওয়ার্ক শিগগিরই ঘোষণা করতে পারে তালেবান। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ।

আফগানিস্তানের চলমান রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন জানান, নতুন সরকার গঠনে তালেবান নেতৃত্ব ও একদল রাজনৈতিক নেতার মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, তালেবানের আইনসম্মত, বৈধ ও পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞরা একটি ফ্রেমওয়ার্ক গঠনের কাজ করছেন। এটিই হবে তাদের সরকারের ভিত্তি। আফগান রাজনীতিকদের সঙ্গে আলোচনার জন্য শনিবার কাবুল পৌঁছেছেন তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও রাজনৈতিক মোল্লা আবদুল গণি বারাদার। সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও হাই কাউন্সিল অব ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন-এর প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ কাবুলের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর আবদুর রহমান মনসুরের সঙ্গে বৈঠকের পরদিন গণি সেখানে পৌঁছালেন। গতকাল পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি তালেবান নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য কাবুল পৌঁছানোর কথা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওয়েইস নাসির জানান, আফগানিস্তানে তালেবানের নতুন সরকার গঠনে পাকিস্তান যে ভূমিকা রাখতে চায়, কুরেশির সফর সেটিই প্রমাণ করে।

সর্বশেষ খবর