বৃহস্পতিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
নারীদের নিয়ে তালেবান

চাকরিতে বাধা নেই, তবে আপাতত বাড়িতেই থাকুন

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মেয়েদের ঘরবন্দী থাকতে হতো। চাকরি বা স্বাধীনতার কথা তাদের ভাবনাতেও ছিল না

দুই সপ্তাহ হতে চলল আফগানিস্তান দখল করেছে তালেবান। তবে তাদের এই দখলে বিশ্ব সম্প্রদায় সব চেয়ে বেশি শঙ্কিত নারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। গত সপ্তাহে কাবুল দখল করেই তারা ঘোষণা করেছিল ২০ বছর আগের সেই তালেবান নেই। কিন্তু সবার ধারণা ছিল এবার হয়তো মেয়েদের বিষয়ে একটু উদার হবে দলটির নেতারা। কারণ ২০ বছর আগে তারা যখন আফগানিস্তান শাসন করছিল তখন মেয়েদের স্বাধীনতা বলে কোনো কিছু ছিল না। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মেয়েদের ঘরবন্দী থাকতে হতো। চাকরি বা স্বাধীনতার কথা তাদের ভাবনাতেও ছিল না। পুরুষসঙ্গী ছাড়া বাড়ি থেকে বাইরে বেরোনো যেত না। এবার কী হবে? সেই ভাবনার মধ্যেই গতকাল তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ বললেন, নারীদের চাকরি করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। তবে যতদিন না দেশ নিরাপদ হচ্ছে, ততদিন তাদের বাইরে বেরোনো যাবে না। তার কথায়, ‘তালেবরা দেশের নারীদের চাকরি করার বিরোধী নয়। তবে সেক্ষেত্রে ইসলামিক আইন লঙ্ঘন করা যাবে না। আপাতত নিরাপত্তার বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাই বাড়ির বাইরে মেয়েদের না বেরোনোর কথা বলছি।’

তবে তালেবানের এ ‘পরামর্শের’ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিভাগের প্রধান মিশেল বাসেলেট জানিয়েছেন, ‘জিহাদিরা দেশের ক্ষমতা দখলের পর নারীদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করে, সেদিকে বিশ্বের নজর রয়েছে।’ তালেবানের মুখপাত্র বলেন, এবারের মেয়াদে নারীদের নিয়ে বিভিন্ন নীতিতে পরিবর্তন আনা হবে। আর কর্মজীবী নারীদের এই ঘরে থাকার নির্দেশনা সাময়িক সময়ের জন্য। তিনি বলেন, ‘নারীদের সঙ্গে কীভাবে আচার-ব্যবহার করতে হবে, সে বিষয়ে আমাদের নিরাপত্তারক্ষীরা অনেক কিছুই জানেন না। তাদের অনেকেই নারীদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, তাও জানেন না। যতক্ষণ না নিরাপত্তার বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারছি, আমরা নারীদের ঘরে থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।’  নারীদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে তালেবান- জাতিসংঘ : আফগানিস্তান দখল করার পর কাবুলে বসে তালেবান মুখপাত্র বলেছিলেন, মানবাধিকারের বিষয়টি খেয়াল রাখা হবে। শরিয়ত আইন মেনে নারীদের অধিকার রক্ষা করা হবে। সহিংস শাস্তি দেওয়া হবে না। এতদিন যারা বিদেশি সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি তেমন নয় বলে জরুরি রিপোর্ট পেশ করলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট। মঙ্গলবার তিনি জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে ভয়াবহ তথ্য এসে পৌঁছেছে তার হাতে।

কী আছে রিপোর্টে : মিশেল জানিয়েছেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে তার কাছে খবর আসছে। নারীদের বাড়ি থেকে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। ছোট ছোট মেয়েদের স্কুলে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। বিদেশি সংস্থায় কাজ করা আফগানদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের মারধর করা হচ্ছে। আফগান সেনায় কাজ করা ব্যক্তিদের রাস্তায় সর্বসমক্ষে হত্যা করা হচ্ছে। নাবালকদের তালেবান বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। মিশেল জানিয়েছেন, বিশেষ করে নারী অধিকারের বিষয়টি তারা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। তালেবান জানিয়েছিল, নারী অধিকার প্রসঙ্গে গতবারের মতো অবস্থান তারা নেবে না। কিন্তু বাস্তব রিপোর্ট তার সঙ্গে মিলছে না বলেই তিনি খবর পাচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর