শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

মার্কিন সেনারা মঙ্গলবারই আফগানিস্তান ছাড়তে চান

এএফপির প্রতিবেদন

মাঝে বাকি আর তিনদিন। এরমধ্যেই সব বিদেশি সৈন্যকে আফগানিস্তান ছাড়তে হবে। এই ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আফগানিস্তানে শুধু মার্কিন সেনা সদস্যই নেই। মার্কিন শরিক ন্যাটো সদস্যদেশগুলোর সেনা সদস্যরাও রয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা বলছে, এই সময়সীমা (৩১ আগস্ট) বাড়িয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু বাইডেন এখন পর্যন্ত এই আহ্বানে কোনো সাড়া দেননি। ফলে আফগানিস্তান থেকে আরও যাদের সরিয়ে নেওয়া দরকার, তাদের জন্য একটি ঝুঁকি তৈরি হতে যাচ্ছে। এএফপির বিশ্লেষণে এ কথা বলা হয়েছে। আফগানিস্তানে যুদ্ধ চালাতে গিয়ে অনেকটা হাফিয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাইতো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালে আফগান সরকারের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি করেছিল।

ওই চুক্তি অনুসারে, গত ১ মের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও বিদেশি সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার কথা। কিন্তু বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর অবস্থান বদলে যায়। তিনি সময় পিছিয়ে ৩১ আগষ্ট করেন। তখন লক্ষ্য ছিল, আফগানিস্তানে থাকা আড়াই হাজার মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে। এ ছাড়া ন্যাটোর কয়েক হাজার সেনাকে সরিয়ে নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ১৬ হাজার বেসামরিক নাগরিককে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা হয়। এই বেসামরিক নাগরিকেরা মূলত বিদেশি বাহিনীগুলোর সঙ্গে কাজ করেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নতুন কিছু সংকট দেখা দিয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র চাইছিল, তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান সরকারকে আরও সময় দেবে তারা। এ ছাড়া আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রিত ঘাঁটিগুলো আফগান সরকারকে দিতে চেয়েছিল তারা। একই সঙ্গে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিজেদের সরঞ্জামগুলোও তুলে দিতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর ধারণা ছিল, তালেবানকে ঠেকাতে না পারলেও তাদের দমিয়ে ফেলতে পারবে আফগান বাহিনী। মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যও সেই ইঙ্গিত দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা বলেছিলেন, সেনা প্রত্যাহারের পর অন্তত ছয় মাস দেশের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারবে আফগান সরকার। এ ছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ধারণা ছিল, আফগানিস্তান থেকে নিজেদের নাগরিক-সেনা সরিয়ে নিতে এবং তাদের সঙ্গে কাজ করা আফগান নাগরিকদের ও তাঁদের পরিবার সরিয়ে নিতে যথেষ্ট সময় তারা পাবে। কিন্তু এসব ধারণা ব্যর্থ প্রমাণিত হয়। কারণ, আফগানিস্তানের বাহিনী তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়। কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার পর বিদেশি নাগরিক ও বিদেশিদের সঙ্গে কাজ করা আফগানদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। তারা চাইছে, যত দ্রুত সম্ভব যেন আফগানিস্তান ত্যাগ করা যায়।

ফলে যুক্তরাষ্ট্র ১৪ আগস্ট কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সেনা মোতায়েন করে। কাবুল থেকে লোকজন সরিয়ে নিতে এই পদক্ষেপ নেয় তারা। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ ৭১ হাজার মানুষকে কাবুল থেকে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এখনো হাজারো মানুষ সরিয়ে নেওয়া বাকি। তারা বিমানবন্দরের ভেতরে-বাইরে অপেক্ষা করছে। এখানেই শেষ নয়। তালেবানও চাইছে না, আফগানরা দেশ ছেড়ে চলে যাক। বিমানবন্দরে যেতে লোকজনকে বাধা দিচ্ছে তালেবান। এর ফলে এই লোকজন সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ার গতি কমে যাচ্ছে।

কিন্তু যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা হয়তো ৩১ আগস্টের মধ্যে লোকজনকে সরিয়ে নিতে পারবে না। তারা চায়, যুক্তরাষ্ট্র এই সময়সীমা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিক। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেও উদ্বেগ বাড়ছে। তারা আশঙ্কা করছে, ৩১ আগস্টের মধ্যে মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে। এমন আশঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ অভিবাসন ভিসা পাওয়া আফগানদের মধ্যেও আছে। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর নেতারা আলোচনায় বসেছিলেন ভার্চ্যুয়ালি। কিন্তু তালেবান বলেছে, তারা সময় বাড়াবে না। এর কয়েক ঘণ্টা পরই বাইডেন বলেন, তিনি আগস্টের মধ্যেই আফগানিস্তান অভিযান শেষ করতে চান।

সর্বশেষ খবর