শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সমান অধিকার চেয়ে কাবুলের রাস্তায় নারীরা

‘‘আমাদের দাবি : শিক্ষার অধিকার এবং সব ক্ষেত্রে নারীদের কাজ করার সুযোগ।’’

সমান অধিকার চেয়ে কাবুলের রাস্তায় নারীরা

আফগান সরকারে অংশীদার থাকার দাবিতে গতকাল কাবুলে নারীরা বিক্ষোভ করে -এএফপি

পশ্চিমা গণমাধ্যম আফগানিস্তানে তালেবান দখল নিয়ে যতটা না শঙ্কিত তার চেয়ে বেশি শঙ্কিত নারীদের বিষয়ে। সেই আবহের মধ্যে দেশটিতে নারীরা রাজপথে নেমেছেন। গত পরশু ও গতকাল নারীরা রাজপথে নেমে তাদের অধিকার নিয়ে বিক্ষোভ করেন। গতকাল কাবুলে একটি বিক্ষোভে নারীরা দাবি করেন পুরুষদের মতো নারীদেরও অধিকার সমান। তারা রাজনৈতিক জীবনে পূর্ণ অংশগ্রহণেরও আবেদন জানান। উইমেন পলিটিক্যাল পার্টিসিপেশন নেটওয়ার্ক নামে একটি দল আফগানিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে রাস্তায় মিছিল করে, স্লোগান দেয় এবং আফগান সরকারে অংশীদার থাকার দাবি জানায়। সমাবেশটি অপেক্ষাকৃত ছোট ছিল- গোষ্ঠীটি সরাসরি সম্প্রচারিত দৃশ্যের ভিডিও দেখিয়েছিল মাত্র কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী। কিন্তু তালেবান শাসনে নারীদের আন্দোলন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আর আগে গত পরশু হেরাতে নারীরা বিক্ষোভ করেছে। তারা বলছেন, শরিয়ত রীতিনীতি মেনে তারা বোরখা পরতে রাজি আছেন, তবে বিনিময়ে মেয়েদের স্কুলে যেতে দিতে হবে।

সমাজে নারীদের ভূমিকা নিয়ে তালেবানের মনোভাব অন্যতম বিতর্কিত ইস্যু। গত মাসে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদও সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, আফগান নারীরা ইসলামী নীতির মধ্যে থেকে কাজ করতে পারবেন। তাঁর কথায়, নারীরা সমাজের অন্যতম মুখ্য উপাদান। ইসলামী কাঠামোর মধ্যে থেকে তাঁরা কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। তালেবান নেতারা প্রকাশ্যে জোর দিয়ে বলেন যে, নারীরা সমাজে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করবে এবং শিক্ষার সুযোগ পাবে। কিন্তু ইসলামী মূল্যবোধের তাদের ব্যাখ্যা মেনে চলার বিষয়ে গ্রুপের প্রকাশ্য বিবৃতি এই আশঙ্কা জাগিয়েছে যে, দুই দশক আগে তালেবান শাসনের কঠোর নীতির দিকে ফিরে আসবে, যখন নারীরা সবাই গৃহের মধ্যেই আটকা পড়বে। কিছু আফগান নারী ইতিমধ্যেই তাদের নিরাপত্তার আশঙ্কায় ইতিমধ্যে বাড়িতে অবস্থান করছে এবং কিছু পরিবার মহিলা আত্মীয়দের জন্য বোরকা কিনছে। কাবুলে গতকালের প্রতিবাদে নারীরা একটি বড় সাইনবোর্ড ধারণ করেছিল যাতে লেখা ছিল, ‘নারীদের সমর্থন ছাড়া কোনো সরকারই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না।’ আমাদের দাবি : শিক্ষার অধিকার এবং সব ক্ষেত্রে নারীদের কাজ করার অধিকার।’

হেরাত বিক্ষোভের প্রতিবাদী লিনা হায়দারি বলেন, তালেবান শাসনের অধীনে ‘নারীদের অধিকার এবং অর্জন, যা আমরা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লড়াই করেছি এবং তা উপেক্ষা করা উচিত নয়।’

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ : সপ্তাহ তিনেক আগে কাবুল দখল করেই তারা ঘোষণা করেছিল তারা ২০ বছর আগের সেই তালেবান নেই। কিন্তু সবার ধারণা ছিল এবার হয়তো মেয়েদের বিষয়ে একটু উদার হবে দলটির নেতারা। কারণ ২০ বছর আগে তারা যখন আফগানিস্তান শাসন করছিল তখন মেয়েদের স্বাধীনতা বলে কোনো কিছু ছিল না। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মেয়েদের ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হতো। চাকরি বা স্বাধীনতার কথা তাঁদের ভাবনাতেও ছিল না। এবার কী হবে?

 

সেই ভাবনার মধ্যেই তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বললেন, নারীদের চাকরি করার ক্ষেত্রে যে কোনো বাধা নেই। তবে যত দিন না দেশ নিরাপদ হচ্ছে, তত দিন তাদের বাইরে বেরোনো যাবে না। তাঁর কথায়, ‘তালিবরা দেশের নারীদের চাকরি করার বিরোধী নয়। তবে সে ক্ষেত্রে ইসলামিক আইন লঙ্ঘন না যাবে না। আপাতত নিরাপত্তার বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাই বাড়ির বাইরে মেয়েদের না বেরোনোর কথা বলছি।’  সংবাদ সম্মেলনে এই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘নারীদের সঙ্গে কীভাবে আচার-ব্যবহার করতে হবে, সে বিষয়ে আমাদের নিরাপত্তারক্ষীরা অনেক কিছুই জানেন না। তাদের অনেকেই নারীদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, তাও জানেন না। যতক্ষণ না নিরাপত্তার বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারছি, আমরা নারীদের ঘরে থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।’

শিক্ষা এবং মহিলাদের অধিকারের ওপর কাজ করে একটি সংস্থা লার্নের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক পশতানা দুররানি গত মাসে বলেছিলেন, তিনি তার দেশের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন- ‘আমরা এখন  আফগানিস্তানের পতনের জন্য আপাতত শোক করছি কিছু সময়।’ তাই আমি খুব ভালো বোধ করছি না। তবে বাস্তবিকে কিন্তু নারীদের প্রতি এখন পর্যন্ত যথেষ্ট নমনীয় তলেবান।

সর্বশেষ খবর