সৌরজগতের মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সূর্য। আর সৌরজগতে তিন নম্বর গ্রহ হিসেবে রয়েছে এই সুন্দর পৃথিবী। আর সেই হিসেবে সূর্য  সবচাইতে নিকটবর্তী একটি নক্ষত্র। এই পৃথিবীর সমস্ত শক্তির উৎস এই সূর্যই। সূর্যই পৃথিবীর প্রাণভোমরা। কিন্তু এই সূর্য যদি মরে যায়, কিংবা ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে কী ঘটবে পৃথিবীর ভাগ্যে? পৃথিবীতে সব প্রকার জীব এবং উদ্ভিদকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সূর্যের কোনো বিকল্প নেই। মূলত সূর্যের জন্যই পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব এখনো টিকে আছে। কিন্তু সত্যি যদি সূর্যটা মরে যায়, কিভাবে মরবে সে! মৃত্যুর আগে দেখতে কেমন হবে! এসব নিয়ে বিজ্ঞানীরা নানা রকম পূর্বাভাস দিয়েছেন। তারা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, সৌরজগতের ইতি ঘটবে কেমন করে, কখনই বা তা ঘটবে। তবে যখনই তা ঘটুক, তা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাবে না মানবজাতি বা কোনো পার্থিব  প্রাণি। কারণ, তার আগেই প্রাণ টিকে থাকার পরিবেশ শেষ        হয়ে যাবে পৃথিবী থেকে।

আগে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করতেন এক সময় সূর্য পরিণত হবে একটি পানেটারি নেবুলা বা নীহারিকায়। তখন তা হবে উজ্জ্বল গ্যাস ও ধূলিকণার একটি পি-। যথেষ্ট পরিমাণ ভারী না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকবে। কিন্তু ২০১৮ সালে এমন পূর্বাভাস থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদদের একটি টিম। তারা দেখতে পেলেন যে, পানেটারি নেবুলা হলো একটি সৌরজগতের মৃত্যুদশা। সূর্যের বয়স প্রায় ৪৬০ কোটি বছর। সৌরজগতের অন্য    বস্তুর বয়সের ওপর ভিত্তি করে এই বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ, সৌরজগতের সঙ্গে সঙ্গে একই সময়ে সৃষ্টি হয়েছে সূর্যের এমনটা ধরা হয়। অন্যান্য নক্ষত্রের ওপর পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে জ্যোতির্বিদরা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, সূূর্যের মৃত্যু ঘটতে পারে আরও ১০০০ কোটি বছর পর। এ সময়ে আরও ঘটনা ঘটবে। প্রায় ৫০০ কোটি বছরের মধ্যে সূর্য পরিণত হবে একটি লাল জায়ান্টে। অর্থাৎ সূর্যের রঙ হবে টকটকে লাল। এর কেন্দ্রীয় অংশ ক্রমশ সঙ্কুচিত হবে। এর বাইরের স্তর বিস্তৃত হবে মঙ্গলগ্রহ পর্যন্ত। এর ফলে যা ঘটবে তা হলো, এই প্রক্রিয়ায় পৃথিবী যদি তার অবস্থানে স্থির থাকে, তাহলে তাকে গ্রাস করবে সূর্য। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, একটি নক্ষত্রকে পানেটারি নেবুলা গঠন করতে যে পরিমাণ ঔজ্জ্বল্য দেখা দেয়, তা তৈরি করতে মূল নক্ষত্রকে সূর্যের ভরের দ্বিগুণ ভরের হতে হয়। ২০১৮ সালে কম্পিউটার মডেলভিত্তিক এক গবেষণায় দেখা যায়, অন্য নক্ষত্রগুলোর শতকরা ৯০ ভাগের মতো সূর্য একটি লাল জায়ান্ট থেকে সঙ্কুচিত হয়ে একটি হোয়াইট ডর্ফ বা সাদা বামনে পরিণত হতে পারে। এরপর তার সমাপ্তি ঘটবে পানেটারি নেবুলায়। যখন একটি নক্ষত্র মারা যায়, তখন সে বিপুল গ্যাস এবং ধূলিকণা নির্গত করে।