শিরোনাম
সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা
চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা

যুদ্ধ কি অনিবার্য?

তাইওয়ানকে চীনের অঙ্গীভূত করার প্রক্রিয়া হবে শান্তিপূর্ণ : জিন পিং - কোনো চাপের কাছেই তাইওয়ান মাথা নত করবে না : ওয়েন

উত্তেজনা বহুদিন ধরেই চলছে। এর মধ্যে সম্প্রতি নতুন করে তাতে ঘি ঢালা হচ্ছে। ফলে চীন ও তাইওয়ানের সম্পর্কে নতুন মাত্রা পেয়েছে। সম্প্রতি চীনের যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা জোনে অনুপ্রবেশ করে। শতাধিক চীনা যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের আকাশে ঘূর্ণি খায়। আবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর দীর্ঘদিন ধরে তাইওয়ান সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মার্কিন বাহিনী। আবার তাইওয়ানের দাবি, তারা স্বাধীন, সার্বভৌম। কিন্তু গত শনিবার তাইওয়ানকে চীনের অঙ্গীভূত করার ঘোষণা দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। তিনি জানান, এই প্রক্রিয়া হবে ‘শান্তিপূর্ণ’। চীন বিপ্লবের ১১০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ওই দিন তিনি বেইজিংয়ের গ্রেট হলে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন। চীন বহু আগে থেকেই এই অঞ্চলকে নিজেদের দাবি করে আসছে। অঞ্চলটির জনগণ ক্রমাগত চীনের আক্রমণের হুমকির মধ্যে বসবাস করছে। প্রয়োজনে জোর করে এটি দখলেরও হুমকি দিয়েছে চীন। তা নিয়ে নতুন এক যুদ্ধের আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু তার ঘোষণাকে উড়িয়ে দিয়েছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। কোনো চাপের কাছেই তাইওয়ান মাথা নত করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। ফলে দুই পক্ষের কঠোর মনোভাব অনিবার্য যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে- তাই বলছেন বিশ্লেষকরা।

তাইওয়ানের সামনে নিজেদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষিত রাখার প্রশ্ন। অন্যদিকে বিশ্বের পরাশক্তি চীনের একটি ‘ইগো’ ইস্যু। ফলে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ওই দুটি দেশের মধ্যে, তা একরকম যুদ্ধের আলামত সামনে এনে দিয়েছে। অনলাইন আল জাজিরা লিখেছে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের একত্রীকরণ অর্থাৎ চীনের সঙ্গে তাইওয়ানকে একীভূত করার ঘোষণা জোরালো হলেও, কঠিন অবস্থান নিয়েছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। অন্যদিকে সমতার ভিত্তিতে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখন্ড দাবি করে গত সপ্তাহে টানা চার দিন সামরিক যুদ্ধবিমান টহল দেয় তাইওয়ান প্রণালিতে। এতে তাইওয়ানের ওপর বৃদ্ধি পেয়েছে সামরিক চাপ। অন্যদিকে বেড়েছে রাজনৈতিক চাপ। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এই দ্বীপরাষ্ট্রটির কাছাকাছি ১৪৯টি সামরিক যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে বেইজিং। বাধ্য হয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করেছে তাইওয়ান। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই দেশটির জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাজধানী তাইপের একটি র‌্যালিতে বক্তব্য রাখছিলেন। তাতে তিনি তাইওয়ান প্রণালিতে উত্তেজনা প্রশমিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। বলেন, তার সরকার হুট করে কোনো কাজ করবে না। তবে কোনো চাপের কাছে তাইওয়ানের জনগণ মাথা নত করবে এমন কোনো মতিভ্রমের মধ্যে থাকা উচিত নয়।

এর আগে তাইওয়ান পরিচিত ছিল রিপাবলিক অব চায়না (আরওসি) হিসেবে। কিন্তু দেশটি পরিচালিত হয় গণতান্ত্রিকভাবে। এর অবস্থান চীনের মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় ১৬১ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের ভিতরে। ১৯৪৯ সালে চীনের গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকেই চীন এবং তাইওয়ান আলাদাভাবে শাসিত হয়ে আসছে। ওই গৃহযুদ্ধের সময় কমিউনিস্টরা বেইজিংয়ে প্রতিষ্ঠা করে পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। অন্যদিকে পরাজিত জাতীয়তাবাদীরা পালিয়ে চলে যান তাইওয়ানে। সেখানে তারা নিজেদের মতো করে একটি সরকার গঠন করেন। প্রকৃত স্বাধীনতা সত্ত্বেও, তাইওয়ানকে নিজেদের একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে দেখে থাকে বেইজিং। তাদেরকে স্বায়ত্তশাসনের অধীনে এক দেশ দুই ব্যবস্থা নীতি প্রস্তাব করে। ঠিক যেমনটা হংকংয়ে প্রচলিত। কিন্তু তাইওয়ানের বেশির ভাগ বড় বড় দল সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার সূচনা এখন থেকে পাঁচ বছর আগে। ওই সময় তাইওয়ানের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সাই ইং-ওয়েন। এ সময় থেকেই রাজধানী তাইপের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেন প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। সেই থেকে জিন পিংয়ের অধীনে চীনের সঙ্গে তাদের উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। ৬৫ বছর বয়সী সাই ইং-ওয়েনকে বেইজিং বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করে। কারণ তিনি তাইওয়ানকে ‘এক চীন’-এর অধীনে এমনটা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি তবু সমতার ভিত্তিতে চীনের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন গতকাল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর