মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভারত ও চীন সামরিক আলোচনা ব্যর্থ, অচলাবস্থা অব্যাহত

ভারত ও চীন সামরিক আলোচনা ব্যর্থ, অচলাবস্থা অব্যাহত

লাদাখের দুটি বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে রবিবার প্রায় আট ঘণ্টা বৈঠক করেন ভারত এবং চীনের সেনা কর্মকর্তারা। এদিন ১৩তম ফ্লাগ মিটিংয়ে বসেছিলেন তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেননি। ভারত এবং চীন দুই দেশই বিবৃতি দিয়ে বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার কথা বলেছে। একে অপরের প্রতি আঙুল তুলেছে।

ফলে ১৭ মাস ধরে সীমান্ত উত্তেজনা একই অবস্থায় থেকে যাচ্ছে। সেখানে উভয় দেশের সেনারা দ্বিতীয়বারের মতো জমাট শীতে অবস্থান করবেন। ১৭ মাস আগে সীমান্তের এ পরিস্থিতিতে সেখানে উভয় দেশের সেনাদের মধ্যে মাঝে মাঝেই ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। এখনো অচলাবস্থার অর্থ হলো চীন এবং ভারত দুই দেশই লাদাখ সীমান্তে সেনা মোতায়েন রাখবে। ফলে টানা দ্বিতীয় বছর সেখানে বিপজ্জনক মাইনাস তাপমাত্রায় অবস্থান করতে হবে সেনাদের।

গতকাল ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আলোচনায় ভারত গঠনমূলক সাজেশন দিয়েছে। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি চীনা পক্ষ। তারা সামনে এগিয়ে যাওয়ার মতো কোনো প্রস্তাবও দেয়নি।

পক্ষান্তরে চীনা সামরিক একজন মুখপাত্রের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতীয় পক্ষ অযৌক্তিক এবং অবাস্তব দাবি নিয়ে অটল ছিল। এতে সমঝোতা    প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে ওঠে। লাদাখের সীমান্ত নিয়ে ভারত-চীন বিতর্ক নতুন নয়। তবে তা এক অন্য পর্যায়ে  পৌঁছায় ২০২০ সালের জুন মাসে। গালওয়ানে দুই দেশের সেনার হাতাহাতিতে একাধিক ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়। তারপর থেকে লাগাতার স্ট্যান্ডঅফ চলছে দুই দেশের মধ্যে। সীমান্তের দুই ধারে দুই দেশই সেনা মোতায়েন রেখেছে। লাদাখে ভারত এবং চীনের মধ্যে ছয়টি এলাকা নিয়ে বিতর্ক আছে। পরিভাষায় যাকে হটস্পট বলা হয়। এর মধ্যে চারটি জায়গা নিয়ে রফাসূত্রে পৌঁছানো গেলেও দুটি অঞ্চল নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে। প্যাংগং লেকের দুই প্রান্ত, গালওয়ানের মতো এলাকাগুলোর সাময়িক সমাধান সূত্র মিলেছে। কিন্তু ডেপসাং এবং হটস্প্রিং অঞ্চল নিয়ে এখনো তুমুল বিতর্ক রয়েছে। এবং এক বছর ধরে ওই এলাকায় দুই দেশের সৈন্য মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।

 

ওদিকে সীমান্তে ব্যাপকভাবে চীনের সেনা ও অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করেছে বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল এম এম নারাভানি। তার এমন মন্তব্যের মধ্যে রবিবারের আলোচনা হতাশা সৃষ্টি করেছে।

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পশ্চিমে লাদাখ থেকে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশকে আলাদা করেছে। এ অরুণাচল প্রদেশের পুরোটাই চীনারা নিজেদের বলে দাবি করে। ভারত ও চীনের মধ্যে রয়েছে ৩৫০০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা। সেখানে ১৯৬২ সালে ভয়াবহ এক যুদ্ধ হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। 

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, যে দুটি অঞ্চল নিয়ে এখন বিতর্ক চলছে, সেই দুটি স্ট্র্যাটেজিক জায়গা। ভারত-চীন কোনো পক্ষই সেই স্ট্র্যাটেজিক জায়গার দখল ছাড়তে চায় না। ফলে সমাধান সূত্রে পৌঁছানো যাচ্ছে না। বস্তুত, প্যাংগং এবং গালওয়ান নিয়েও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কয়েক মাস স্ট্যান্ডঅফ চলার পরে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করে সাময়িক সমাধানের রাস্তা খুঁজে বের করেছিলেন। কিন্তু তাতেও যে পুরো সমস্যার সমাধান হয়নি, তা স্পষ্ট। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, সেনাস্তরের বৈঠক করে ওই দুটি অঞ্চলের বিতর্ক মেটানো যাবে বলে তিনি মনে করেন না।

সর্বশেষ খবর