মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

আন্তর্জাতিক চাপে পাঁচ হাজার গণতন্ত্রকামীকে মুক্তি দিচ্ছে জান্তা

আন্তর্জাতিক চাপে পাঁচ হাজার গণতন্ত্রকামীকে মুক্তি দিচ্ছে জান্তা

ইয়াঙ্গুনের একটি কারাগার থেকে বেশকিছু বন্দীকে গতকাল মুক্তি দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার -এএফপি

গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল মিয়ানমার। সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন হাজার হাজার গণতন্ত্রকামী মানুষ। সংবাদমাধ্যমের উপর নেমে আসছে খড়গ। দেশটিতে চলছে তুমুল গৃহযুদ্ধ। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক চাপ। বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সংস্থা আসিয়ানের প্রভাবশালী সদস্য মিয়ানমার। আগামী ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে ব্রুনাইয়ে। সেই সম্মেলনে ডাক পাচ্ছেন না মিয়ানমারের সেনাশাসক জেনারেল মিন অং হ্লাইং। এতে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ দেশটির জান্তা প্রশাসন। এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে গতকাল জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং ঘোষণা দিয়েছেন তারা ৫ হাজার ৬৩৬ গণতন্ত্রকামীকে মুক্তি দিবে। সেনাশাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় এই গণতন্ত্রকামীদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। ‘থাডিঙইয়ুত উৎসব’ উপলক্ষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জান্তা প্রধান হ্লাইং। তবে মুক্তি পেতে চলা বন্দিদের তালিকায় কাদের নাম রয়েছে এবং কীভাবে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে সেই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাননি তিনি।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে আচমকা নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে মায়ানমারের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেয় সেনাবাহিনী। কাউন্সিলর আং সান সু কি-সহ গণতান্ত্রিক সরকারের অন্য প্রতিনিধিদের গ্রেফতার করা হয়। তারপর সেদেশে আগুন জ্বলে ওঠে। গণতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে পথে নামে লাখো মানুষ। পাল্টা, বিক্ষোভ থামাতে চরম নির্যাতন চালায় সরকারি সেনাবাহিনী।

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ভিন্নমতের ওপর হামলা-সংঘাতের জেরে ১ হাজার ১০০ জনের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হন। এ ছাড়া আট হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় একটি পর্যবেক্ষণকারী দল। দ্য অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারসের তথ্য অনুযায়ী, এ মুহূর্তে মিয়ানমারে ৭ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ কারাবন্দী। এই সময়ে জুন্টার তরফে বন্দিমুক্তির ঘোষণা কিছুটা হলেও আশার আলো জাগিয়েছে।

এর আগে গত জুলাইয়ে মিয়ানমারজুড়ে দুই হাজারের বেশি অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনকারীকে মুক্তি দেয় দেশটির সরকার। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সাংবাদিকরাও। তবে এখনো মার্কিন সাংবাদিক ড্যানি ফেনস্টার ছাড়া পাননি। তাঁকে গত ২৪ মে থেকে বন্দী করে রাখা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ঘরে ও বাইরে প্রবল চাপের মুখে পড়েছে সেনাশাসকরা। বার্মিজ সেনার কর্মকর্তাদের উপর একাধিক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা। শুধু তাই নয়, দেশের অন্দরে জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ি এলাকাগুলোতে বার্মিজ ফৌজের সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে বিদ্রোহী বাহিনীর। ফলে, অনেকটাই চাপে পড়েছে জান্তা। তাই আপাতত বন্দিদের মুক্তি দিয়ে কিছুটা হলেও জনতার আক্রোশ প্রশমিত করার চেষ্টা করছে সেনাশাসকরা।

অশান্তির জন্য বিরোধীরা দায়ী-জান্তা প্রধান: মিয়ানমারের বিরোধীদলগুলো যে উস্কানি ও সহিংসতা চালাচ্ছে আসিয়ান তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মিয়ানমারের জান্তা প্রধান। দেশটির ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনী শান্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে গতকাল টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে দাবি করেছেন তিনি। রয়টার্স জানায়, মিয়ানমারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আসিয়ানের রোডম্যাপের বিষয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করায় জোটের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে হ্লাইংকে আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারপর করা প্রথম মন্তব্যে হ্লাইং মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনর্বহাল করতে জান্তার নিজস্ব পাঁচ-ধাপের পরিকল্পনার পুনরাবৃত্তি করেন কিন্তু আসিয়ানের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

 নিষিদ্ধ ঘোষিত জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার (এনইউজি) ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র দলগুলো আসিয়ানের নেতৃত্বাধীন শান্তি প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে বলে ধারণা দেন ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া হ্লাইং। এই অভ্যুত্থান মিয়ানমারকে মারাত্মক বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর