সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

গ্লাসগোয় সভ্যতা রক্ষার তাগিদ

গ্লাসগোয় সভ্যতা রক্ষার তাগিদ

নিরাপদ ধরিত্রীর দাবিতে সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে সোচ্চার পরিবেশবাদীরা-এএফপি

বিশ্বকে রক্ষার সম্মেলন শুরু হয়েছে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে। মানুষের নীতির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব শুরু হয়েছে তা যদি মোকাবিলা করা না যায় তা হলে অচিরেই হুমকিতে পড়বে বর্তমান সভ্যতা। আর তা রক্ষার খাতিরেই গ্লাসগোতে বসেছেন বিশ্ব নেতারা। শুরু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত কপ-২৬। যদিও এই বৈঠকে বলিষ্ঠ ভূমিকা নেওয়ার কথা তাদের অনেকে অনুপস্থিত।

গতকাল শুরু হওয়া এ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনে প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধি ২০৩০ সালের মধ্যে তারা কীভাবে কার্বন নিঃসরণ কমাবেন এবং পৃথিবী  নামক গ্রহকে সাহায্য করবেন, তার ঘোষণা দেবেন।

মানুষের জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে নির্গত গ্রিন হাউস গ্যাসে বিশ্ব ক্রমে উষ্ণ হয়ে উঠছে, সে কারণেই বিজ্ঞানীরা জলবায়ু সংক্রান্ত ভয়াবহ বিপর্যয়কর পরিস্থিতি এড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ চাইছেন। না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে সতর্কও করেছেন তারা। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, এই সম্মেলন বিশ্বের জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুহূর্ত।’ দুই সপ্তাহের এই সম্মেলনের প্রাক্কালে নেতাদের তা সফল করার তাগিদ দিয়ে জনসন বলেছেন, ‘আমরা এ মুহূর্তকে কাজে লাগাতে পারব নাকি ফসকে যেতে দেব প্রত্যেকেই সে প্রশ্ন করছেন।’

কপ-২৬ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা বলেছেন, পাঁচ বছর আগে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে আমরা যা অর্জন করেছিলাম এবার তেমন চুক্তিতে পৌঁছা কঠিন হবে। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের দেশগুলো তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করার লক্ষ্যমাত্রা নিতে  একমত হয়েছিল।

কিন্তু বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এখন ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পথে আছে, যা জলবায়ু বিপর্যয় ঘটাতে পারে, বলছে জাতিসংঘ। বিবিসি ওয়ান এর অ্যান্ডরু মার শো তে অলোক শর্মা বলেন, ‘তাপমাত্রা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখাটা এখন নেতাদের ওপর নির্ভর করছে। তাদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন এবং তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার ওই লক্ষ্য আমরা কীভাবে পূরণ করব সে ব্যাপারে আমাদের একযোগে একমত হওয়া দরকার।’ ‘বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী চীনের মতো দেশগুলোর কাছ থেকে আমরা আরও বেশিকিছু আশা করি এবং এই জলবায়ু সম্মেলন এক্ষেত্রে তাদের জন্য নেতৃত্ব দেখানোর সত্যিকারের একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে।’

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বর্তমানে যে হারে পৃথিবী উত্তপ্ত হয়ে উঠছে গত সোয়া এক লাখ বছরে তা দেখা যায়নি। পৃথিবীতে সূর্যের তাপকে আটকে রাখে গ্রিনহাউস গ্যাস। মানুষের কর্মকান্ড থেকে এসব গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো এবং গাছপালা কেটে ফেলার কারণে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন ঘটে।  এ অবস্থা থেকে উত্তরণের এখনই সময়।

সম্মেলনের প্রথম দিনই বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপদাহ, বন্যা ও দাবানলের মতো চরম আবহাওয়াজনিত দুর্যোগগুলোর তীব্রতা বাড়ছে। গত দশক ছিল এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ দশক; পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া যে প্রয়োজন, সে বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকাররা একমতও হয়েছে। জাতিসংঘের জলবায়ু সংক্রান্ত এ আয়োজন যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত হওয়া অন্যতম বড় সম্মেলন। সম্মেলনটি গত বছর হওয়ার কথা থাকলেও মহামারীর কারণে এক বছর পিছিয়ে যায়।

সম্মেলনে অংশ নিতে অনেক নেতাই গ্লাসগো গেছেন রোমে জি-২০ সম্মেলন শেষ করে। গতকালই মূলত সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী। তাই খুব বেশি আলোচনা এদিন হবে না।

সর্বশেষ খবর