সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

রহস্য ভেদ করে প্রকাশ্য তালেবানপ্রধান

রহস্য ভেদ করে প্রকাশ্য তালেবানপ্রধান

তাঁকে নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। তবে সম্প্রতি গোটা বিশ্ব একপ্রকার মেনে নিয়েছিল তালেবানপ্রধান হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা নিহত হয়েছেন। তালেবান কাবুল দখলের পরই তাঁকে যখন জনসমক্ষে দেখা যায়নি, তখন আরও জোরালো হয়েছিল আখুন্দজাদার মৃত্যুর খবর। কিন্তু কাবুল দখলের ঠিক আড়াই মাস পর তালেবানপ্রধান হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা জানিয়ে দিলেন তিনি বেঁচে আছেন। আর বহাল তবিয়তেই রয়েছেন। শনিবার আখুন্দজাদা কান্দাহারে একটি জনসভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে তিনি দেশের মানুষের উদ্দেশে ভাষণও দিয়েছেন। তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর এটাই ছিল তার প্রথম জনসভা।

তালেবান সূত্রে জানানো হয়েছে, হায়বাতুল্লাহ শনিবার কান্দাহারের দার-উল-হামিকা মাদরাসায় গিয়েছিলেন। মাদরাসায় অবস্থান করার সময় তাঁর সঙ্গে সেখানে থাকা ঊর্ধ্বতন এক তালেবান নেতা পরে রয়টার্সকে জানান, সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা কান্দাহারের জামিয়া দারুল উলুম হাকিমিয়া মাদরাসা ঘুরে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়ার পর সেপ্টেম্বরে তালেবান তাদের অন্তর্র্বর্তী সরকারের সদস্যদের নাম ঘোষণা করলেও আখুন্দজাদা থেকে যান তালেবানের ‘সর্বোচ্চ নেতা’ পদেই।

সেখানে তিনি তালেবান যোদ্ধাদের উদ্দেশেই ভাষণ দেন। যদিও তাঁর বক্তব্যে কোনো রকম রাজনৈতিক ছোঁয়া ছিল না। আফগানিস্তানে তালেবানদের জয়ের জন্য তিনি মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি নিহত তালেবান যোদ্ধাদের শহীদ বলে উল্লেখ করেছেন। আখুন্দজাদার এই  সফর ঘিরে গোটা কান্দাহারে ছিল কড়া নিরাপত্তা। সংবাদকর্মীদের প্রবেশের ওপর জারি করা হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতার মাত্র ১০ মিনিটের একটি অডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছে তালেবানরা। আখুন্দজাদা তালেবানদের শীর্ষ নেতা। আমির উল মুমিনিন হিসেবেই পরিচিত। আফগানিস্তানে তালেবানদের জয়ের পেছনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তালেবান সরকারে সরাসরি তিনি নেই। কিন্তু শেষ কথা তিনিই বলবেন। তাঁর সিদ্ধান্তই হবে শেষ সিদ্ধান্ত। তালেবান সরকারে তাঁর যে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে সেই কথাও জানিয়েছেন এক তালেবান নেতা। আগস্টের ১৫ তারিখ তালেবানরা আফগানিস্তানের দখল নেয়। তালেবানদের এই জয়ের পর সংগঠনের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্বকে জনসমক্ষে দেখা গেলেও হায়বাতুল্লাহকে দেখা যায়নি।

 তাই তাঁর মৃত্যু নিয়ে জল্পনা চরমে পৌঁছেছিল। সম্প্রতি একটি টেলিভিশণে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় প্রবীণ তালেবান নেতা আমির আল মুমিনিন জানিয়েছিলেন, পাকিস্তান বাহিনীর হামলাতেই এক বছর আগে শহীদ হয়েছেন হাইবাতুল্লাহ। একটা সময় শোনা গিয়েছিলে হাইবাতুল্লা পাকিস্তানের সেনা বাহিনীর হেফাজতে রয়েছে। নিরাপত্তা দিতেই পাকিস্তান বাহিনী তাঁকে হেফাজতে নিয়েছে বলেও গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। অনেকেই আবার দাবি করেছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাঁকে হত্যা করেছে। এবার সেই তত্ত্বেই মান্যতা দিল তালেবানরা।

কিন্তু তারপর শনিবার তালিবান সূত্রেই দাবি করা হয়েছে হাইবাতুল্লাহ বেঁচে রয়েছেন। ২০১৬ সাল থেকেই তালেবানদের নেতা হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। দলের রাজনৈতিক, সামরিক ও ধর্মীয় বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নেন তিনি। যদিও শনিবারের ঘটনার পর কিছু তালেবান কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হাইবাতুল্লা খুব কমই জনসমক্ষে উপস্থিত হন। তিনি বরাবরই জনসমাবেশ এড়িয়ে চলেন। একমাত্র সংবাদ সংস্থা রয়টার্সই তাঁর ছবি যাচাই করতে সক্ষম হয়েছে; যা ২০১৬ সালে তালেবানরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছিল। যদিও তালেবানরা এর আগে মোল্লা ওমরের মৃত্যুর খবর বেশ কয়েক বছর ধরে চেপে রেখেছিল। তাই হাইবাতুল্লাকে নিয়েও কিছু সংশয় রয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর