শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
ভয়াবহ মাদক পরিস্থিতি

মৃত্যু এক লাখ ছাড়াল যুক্তরাষ্ট্রে

মৃত্যু এক লাখ ছাড়াল যুক্তরাষ্ট্রে

যুক্তরাষ্ট্রে মাত্রাতিরিক্ত মাদক গ্রহণে মৃত্যু আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীকালে গত এক বছরে অতিরিক্ত মাদক গ্রহণে ১ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) প্রকাশিত তথ্যে বিষয়টি উঠে এসেছে।

এটিই দেশটির ইতিহাসে মাদকে এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যু। গবেষকরা মনে করছেন, এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর সঙ্গে কভিড-১৯ মহামারীরও সংযোগ রয়েছে। গত দুই দশক ধরেই অতিরিক্ত মাদক গ্রহণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তবে গত দুই বছরে এ ধরনের মৃত্যু সব হিসাব ছাড়িয়ে গেছে। গত বছরই এটি বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। এ নিয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একে ‘ট্র্যাজিক মাইলফলক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মার্কিন কর্মকর্তারা এখন কংগ্রেসের কাছে কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সমস্যাটি চিহ্নিত ও সমাধান করার আহ্বান জানাচ্ছেন।

দেশটির ন্যাশনাল ড্রাগ কন্ট্রোল পলিসির পরিচালক ড. রাহুল গুপ্তা বলেন, এটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য এবং এখনই এর বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মূলত ফেন্টানিলের ব্যবহার বৃদ্ধিই এই মৃত্যুর হারকে বৃদ্ধি করেছে। এ ছাড়া মহামারীর কারণে মাদকাসক্তরা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং নিজেদের চিকিৎসা করানোর সুযোগ হারিয়েছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ক্যাথেরিন কিয়েস বলেন, মৃত্যুর এই সংখ্যা ভয়াবহ। মাদকে এত মানুষের মৃত্যু আমরা কখনো দেখিনি।

এই মৃত্যু এরই মধ্যে গাড়ি দুর্ঘটনা, গুলি, জ্বর ও নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস যা সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। মাদকে মৃত্যু এখন ডায়াবেটিসে মৃত্যুকে ধরে ফেলেছে।

এপি নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ফেন্টানিলের ব্যবহারই অতিরিক্ত মৃত্যুর পেছনে রয়েছে। মাদকে মৃত্যুতে ৫ বছর আগেই হেরোইনকে ছাড়িয়ে যায় ফেন্টানিল। এখন মাদক ব্যবসায়ীরা অন্য মাদকের সঙ্গেও ফেন্টানিল মিশিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে মেথামফেটামাইন ও কোকেনে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। মূলত চীন থেকে আসে এই কেমিক্যাল। মেক্সিকোর মাফিয়ারা এই কেমিক্যাল দিয়ে ফেন্টানিল উৎপাদন করে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে দেয়। ফলে সম্প্রতি মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনীগুলো এ নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত বছর রেকর্ড ১২ হাজার পাউন্ডেরও বেশি ফেন্টানিল জব্দ করেছে তারা।

এদিকে সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ প্রমোশনের লার্নার সেন্টারের পরিচালক শ্যানন মোনাট বলেন, ড্রাগ ওভারডোজে মৃত্যু ‘একটি আমেরিকান ট্র্যাজেডি এবং এটি প্রতিরোধযোগ্য।’ তিনি এ থেকে বাঁচার সম্ভাব্য কিছু সমাধানের কথা বলেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, ফেন্টানিল পরীক্ষার স্ট্রিপ তৈরি। তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বীকার করতে হবে যে গত ২০ থেকে ৩০ বছরে মাদকের ব্যবহার বাড়তে থাকা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার একটি উপসর্গ।’ বিবিসি

সর্বশেষ খবর