শনিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভারতে কৃষকদের জয়

বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা নরেন্দ্র মোদির

নয়াদিল্লি ও কলকাতা প্রতিনিধি

ভারতে কৃষকদের জয়

ভারতে ৩টি কৃষি সংস্কার আইন বাতিল করার ঘোষণার পর কৃষকরা গতকাল আনন্দে মেতে ওঠেন। দিল্লির সিংহুতে ঘোড়ায় চেপে, মিষ্টি বিলিয়ে শোভাযাত্রা করেন তারা -এএফপি

অবশেষে বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল শিখ সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু নানকের জন্মজয়ন্তীতে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণদানকালে এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বরাবরই কৃষকের সুবিধার কথা ভেবে কাজ করেছি। কৃষকের মঙ্গল কামনা করেই কৃষি আইন আনা হয়েছিল। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও কিছুসংখ্যক কৃষককে আমরা তা বোঝাতে পারিনি। তাই আমরা এ তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চলতি মাসের মধ্যেই এ আইন ফিরিয়ে নেওয়ার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটিতে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি ও কৃষিবিশেষজ্ঞ থাকবেন।’ আইন তিনটির বিরুদ্ধে এক বছরের বেশি সময় ধরে আন্দোলনরত লাখ লাখ কৃষকের উদ্দেশে মোদি বলেন, ‘এবার আপনারা বাড়ি ফিরে যান। আসুন সব নতুন করে শুরু করা যাক।’

কৃষি আইন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মোদি বলেন, ‘কৃষকের অবস্থা যাতে উন্নত হয়, সামাজিক অবস্থান যাতে আরও শক্তিশালী হয় সে উদ্দেশ্য নিয়েই তিন কৃষি আইনের সূচনা করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল দেশের কৃষক বিশেষত ছোট কৃষকরা যাতে ন্যায্য দামে তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারেন। বহু বছর ধরেই এ দাবি উঠে আসছিল, এর আগেও বহু সরকার এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করেছিল। এবারও সংসদে আলোচনার মাধ্যমেই এ আইনগুলো আনা হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষক ও সংগঠনগুলো এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য পবিত্র হলেও কিছু কৃষককে এ কথা বোঝাতে পারিনি। কৃষকের এক অংশ এর বিরোধিতা করলেও তা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দেশের কৃষিবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, কৃষিবিশেষজ্ঞরা কৃষককে নতুন তিন কৃষি আইনের সুবিধা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। আজ দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি, হয়তো আমাদের তপস্যায় কোনো ঘাটতি ছিল, তাই প্রদীপের আলোর মতো এই সত্য কৃষককে বোঝাতে পারিনি।’

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সংসদে পাস হয় এ তিন কৃষি আইন। আইন তিনটি বাতিলের দাবিতে ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের কৃষক। সময় যত গড়িয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে এ অরাজনৈতিক আন্দোলনকে সমর্থন জানায়। বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে আবার সরাসরি ওই আন্দোলনে এসে যোগ দিতেও দেখা যায়। আন্দোলন চলাকালে কয়েকজন কৃষক আত্মহত্যাও করেন। সমস্যা সমাধানে কৃষকের সঙ্গে কেন্দ্রের কয়েক দফা আলোচনা হলেও সমাধানসূত্র অধরাই থেকে যায়।

এরই মধ্যে বিক্ষোভরত কৃষকের হয়ে তিন কৃষি আইনকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা হয়। তিন কৃষি আইনের বৈধতা নিয়ে কংগ্রেস, সিপিআইএম, তৃণমূল কংগ্রেস, আপসহ বিভিন্ন বিজেপিবিরোধী দল প্রশ্ন তুলে এ আইন প্রত্যাহারের দাবিও জানায়। রাজনীতিকদের অভিমত- সামনেই উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের মতো রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন। ভোটের আগে এ আইন প্রত্যাহার করা না হলে তার প্রভাব ভোটবাক্সে পড়ত। আর তা বুঝতে পেরেই এ আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর