শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ঘনিষ্ঠ হচ্ছে চীন-রাশিয়া উদ্বেগ পশ্চিমা বিশ্বের

ঘনিষ্ঠ হচ্ছে চীন-রাশিয়া উদ্বেগ পশ্চিমা বিশ্বের

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত হয়। এক পাশে আমেরিকা, অন্য পাশে রাশিয়া। যে সময়টিকে বলা হয় ‘স্নায়ুযুদ্ধের’ সময়। ’৯০-এর দশকে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। সেই স্নায়ুযুদ্ধের ফের আলামত দেখা দিয়েছে। তবে এবার একপাশে রাশিয়া ও চীন, অন্য পাশে আমেরিকা ও ইউরোপ।

এ অবস্থায় সম্প্রতি জাপানের সমুদ্রসীমার কাছেই যুদ্ধজাহাজ নিয়ে মহড়া করেছে চীন ও রাশিয়া। পাঠিয়েছে বোমাবাহী যুদ্ধবিমানও, যা জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা জোনের মধ্য দিয়ে একাধিকবার উড়ে গেছে। সিউল বাধ্য হয়েছে পাল্টা যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে শত্রুকে নিজেদের সীমার বাইরে পাঠিয়ে দিতে। পুরো বিষয়টি নিয়ে গত মঙ্গলবার গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিশি নবু। রাজধানী টোকিওতে সাংবাদিককের কাছে তিনি বলেন, জাপানকে ঘিরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।

জাপান যখন উদ্বেগ জানিয়ে যাচ্ছে তখন রাশিয়া ও চীনের কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করতে ব্যস্ত। আকাশ ও সাগরে আরও মহড়া চালানোর মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে দুপক্ষের মধ্যে। রাশিয়ার পক্ষে এতে স্বাক্ষর করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শইগু এবং চীনের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংহে। চুক্তি অনুযায়ী এশিয়া-প্যাসিফিক এলাকার জাপান সাগর ও পূর্ব চীন সাগরে যৌথ মহড়া চালাবে রাশিয়া ও চীন। সাম্প্রতিক সময়ে চীন ও রাশিয়ার মধ্যেকার সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে চীন ও রাশিয়ার মধ্যেকার এ ঘনিষ্ঠতা পশ্চিমা দেশগুলোর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দারা বলছেন, চীন ও রাশিয়ার এ সুসম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সদস্যগুলোর জন্য ইতিহাসের সব থেকে বড় হুমকি। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের হুমকি মোকাবিলায় ১৯৪৯ সালে তৈরি করা হয়েছিল ন্যাটো। এখন জোটটি রাশিয়া ও চীন উভয় রাষ্ট্রকেই নিজেদের প্রধান শত্রু মনে করছে।

শুধু প্রতিরক্ষাই নয়, দুই দেশ কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। ইরান, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া ও ভেনিজুয়েলা ইস্যুতে চীন ও রাশিয়ার অবস্থান একই। দুই দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে রয়েছে দারুণ সম্পর্কও। ২০১৩ সালের পর থেকে দুজন ৩০ বারের বেশি দেখা করেছেন। পুতিনকে নিজের ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ বলে ডাকেন শি।

রাশিয়া হচ্ছে চীনের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী রাষ্ট্র। একই সঙ্গে জ্বালানি তেলের জন্যও রাশিয়ার ওপরে নির্ভর করে দেশটি। অপরদিকে চীন হচ্ছে রাশিয়ার প্রধান বাণিজ্য সহযোগী রাষ্ট্র। দেশটির শক্তি খাতেও ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে রাশিয়ার।

গত মাসে লন্ডনভিত্তিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টল্টেনবার্গ বলেন, তিনি রাশিয়া ও চীনকে আর আলাদা হুমকি হিসেবে দেখেন না। দেশ দুটি ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। এখন তারা আমাদের জন্য একটা বড় হুমকি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রাশিয়াকে বিশ্বের ওপর প্রভাব বিস্তারে সাহায্য করছে। অপরদিকে চীনও এ সম্পর্কের কারণে রাশিয়ার উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির অ্যাক্সেস পাচ্ছে।

একই সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতার যে ঘাটতি রয়েছে তাও ভরিয়ে দিচ্ছে রাশিয়া। আবার পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় থাকায় রাশিয়ারও কিছু প্রযুক্তি সহায়তার প্রয়োজন সৃষ্টি হয়েছে। তা মেটাতে পারছে চীন। দ্য গার্ডিয়ান

সর্বশেষ খবর