শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির বাজারও চীনের দখলে

বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির বাজারও চীনের দখলে

জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের দাবিতে সচেষ্ট এখন পরিবেশবাদীরা। ফলে ভবিষ্যতে জ্বালানি তেলে চলা গাড়ি চলাচল যে বন্ধ হবে তা অনেকটা নিশ্চিত। আর এ অবস্থায় দিন দিন চাহিদা বেড়েই চলছে বৈদ্যুতিক গাড়ির। আর বৈদ্যুতিক গাড়ি বলতে সাধারণত ইলন মাস্কের টেসলার নামই প্রচলিত। ক্যালিফোর্নিয়ার এই কোম্পানিটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রীত বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করে। সম্প্রতি এর বাজার মূল্য পৌঁছেছে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে। কিন্তু এই মার্কিন সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে চীনের উৎপাদন ক্ষমতার গল্প। টেসলার শুধু যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি তৈরি করে না। তাদের কারখানা রয়েছে চীনেও। এমন কী সাংহাইতে অবস্থিত টেসলার কারখানা বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার কারখানার চেয়েও বড়। উৎপাদনও বেশি। বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রধান অংশই ব্যাটারি। যার বেশির ভাগ এখন চীনের দখলে। এমনকি ব্যাটারি রিচার্জের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানও কিছু চীনা সংস্থা খনন ও পরিশোধন করে থাকে। বিশ্বে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার বাড়তে থাকায়, ব্যাটারি সাপ্লাই চেইনে নিজেদের অবস্থান জোরদার করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চীন।

কোবাল্ট স্পেশালিস্ট সরবরাহকারী ডার্টন কমোডিটির অনুমান অনুযায়ী, গত বছর বিশ্বের ব্যাটারি বাজারে প্রয়োজনীয় কোবাল্টের ৮৫ শতাংশ সরবরাহ করে চীনা কোম্পানিগুলো। লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হয় কোবাল্ট। ফলে এর চাহিদাও অনেক। এই কোবাল্টের বেশিরভাগ আসে কঙ্গো থেকে। কঙ্গোর খনিজ খাতের প্রায় ৭০ শতাংশ রয়েছে চীনা কোম্পানিগুলোর অধীনে।

সম্প্রতি কিছু গাড়ি এবং ব্যাটারি নির্মাতা তাদের ব্যাটারিতে কোবাল্টের পরিমাণ কমিয়ে নিকেলের ব্যবহার শুরু করেছে। কিন্তু, যেসব চীনা কোম্পানি কঙ্গোতে কোবাল্ট খনির আধিপত্যে রয়েছে, তারাই ইন্দোনেশিয়াতে নিকেল উত্তোলন এবং প্রক্রিয়াকরণে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম নিকেল মজুদ (৭২ মিলিয়ন টন) রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। ফলে, ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে নিকেলের বৃহত্তম উৎপাদক এখন চীন।

তবে, কঙ্গোতে চীনের আধিপত্য বিস্তার বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবছে দেশটির সরকার। দেশটির কোলওয়েজি শহর সফরে প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসকেডি বলেন, ‘মানুষ খালি হাতে কঙ্গোতে আসে এবং বিলিয়নিয়ার হয়ে ফিরে যায়। কিন্তু আমরা দরিদ্রই রয়ে যাই।’ তামা-কোবাল্ট বেল্টের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই শহর। ২০০৭ সালে সিকোমাইনের ওপর চীনা কনসোর্টিয়ামকে সংখ্যাগরিষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ প্রদানকারী ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিসহ দেশটির কিছু বড় খনির চুক্তির পর্যালোচনা ঘোষণা করেছে কঙ্গোর সরকার। তবে, এ বিষয়ে চীনা খনিজ কোম্পানিগুলো বলছে ভিন্ন কথা। একজন চীনা ম্যানেজার বলেন, ‘কঙ্গো সরকারের সঙ্গে কাজ করা খুবই হতাশাজনক। সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ এটি।’

এদিকে চলতি বছরের এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ২ ট্রিলিয়ন ডলার অবকাঠামো প্যাকেজের অংশ হিসেবে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে ১৭৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই অর্থ বরাদ্দ সত্ত্বেও দেশটি চীনের তুলনায় পিছিয়ে আছে। দ্য গার্ডিয়ান

সর্বশেষ খবর