বৃহস্পতিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ইউক্রেন নিয়ে বাগযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া

সীমান্তে সৈন্য সমাবেশের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ন্যাটোর

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যে কোনো নতুন সামরিক আগ্রাসনের জন্য মস্কোকে চড়া মূল্য দিতে হবে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো। এর পাল্টা জবাবে আমেরিকা এবং ন্যাটো সামরিক জোটকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন ইস্যুতে তারা যেন কেউ রাশিয়ার রেড লাইন ক্রসের চেষ্টা না করেন।

গত মঙ্গলবার রাজধানী মস্কোতে অনুষ্ঠিত বিয়োগ সম্মেলনে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে ন্যাটো সামরিক জোট যে সেনা উপস্থিতি জোরদার করছে সেটি রাশিয়ার জন্য রেড লাইন। আমি আশা করি তারা কেউ এই রেড লাইন ক্রস করবেন না।’ পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেনে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে যা ৭ থেকে ১০ মিনিটের ভিতরে মস্কোয় আঘাত হানতে সক্ষম। আর যদি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হয় তাহলে ৫ মিনিটের ভিতরে মস্কোয় পৌঁছে যাবে। বিষয়টি  আপনারা কল্পনা করুন। পরিস্থিতি যদি এমন হয়  তাহলে আমাদের কী করণীয় আছে? যারা আমাদের  জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে তখন আমাদেরকেও একই রকমের ব্যবস্থা নিতে হবে। সে কাজ আমরা এখনই করতে পারি।’

পুতিন তার বক্তৃতার মাঝে রাশিয়ার সামরিক শিক্ষা, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, রাশিয়া সম্প্রতি সমুদ্রভিত্তিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে যা নতুন বছরের শুরুতে রুশ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হবে।

একইদিন রাশিয়ার বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দেয় আমেরিকা ও ন্যাটো। তারা ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার বিপুল সৈন্য সমাবেশের সম্ভাব্য উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সাংবাদিকদেরকে ন্যাটো মহাসচিব জেনারেল জেনস স্টল্টেনবার্গ বলেন, ‘ইউক্রেইন রাষ্ট্রের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে রাশিয়া যদি ফের একবার শক্তির প্রয়োগ ঘটায়, তাহলে এর জন্য তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে।’ একই সুরে কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনও। তিনি বলেন, ‘উত্তেজনা বাড়াবে রাশিয়ার এমন যে কোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গভীর উদ্বেগের হবে, আর নতুন করে কোনো আগ্রাসন চালানো হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ।’

প্রসঙ্গত, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। রাশিয়া, ইউক্রেন ও ন্যাটো সবাই সামরিক মহড়া করেছে এবং কারা মূল আগ্রাসনকারী তা নিয়ে একে অপরকে দোষারোপও করে চলেছে। এদিকে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস স্মাইহল রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিয়েভের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতচেষ্টার অভিযোগ এনেছেন। যদিও ক্রেমলিন এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

এ ছাড়া গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির জেলেনস্কিও অভ্যুত্থানের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন; এর জন্য একদল রুশ ও ইউক্রেনের নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও সরাসরি মস্কোকে দোষারোপ করেননি তিনি।

যুক্তরাজ্যের শীর্ষ হুমকি চীন, রাশিয়া, ইরান : এদিকে ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্স-এর প্রধান রিচার্ড মুর বলেছেন, চীন বিশ্বজুড়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করছে। যা ব্রিটেন ও তার মিত্রদের বড় হুমকির একটি। বেইজিংয়ের কোনো ভুল হিসাবের পরিণতিতে যুদ্ধ শুরু হতে পারে। ২০২০ সালের অক্টোবরে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম প্রকাশ্য বক্তব্যে রিচার্ড মুর বলেন, চীন, রাশিয়া, ইরান ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ হলো বড় চারটি নিরাপত্তা ইস্যু, অস্থিতিশীল বিশ্বে ব্রিটেনের গুপ্তচররা যেগুলোর মোকাবিলা করছে। বক্তব্যে তিনি জানান, এমআইসিক্সের কাছে এককভাবে অগ্রাধিকার পাচ্ছে চীন। এ ছাড়া দেশটিকে তিনি স্বৈরাচারী রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মুর বলেন, যুক্তরাজ্য ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের গোয়েন্দা অভিযান পরিচালনা করছে বেইজিং। রাশিয়ার কাছ থেকেও একটি হুমকি মোকাবিলা করছে যুক্তরাজ্য। আমরা এবং আমাদের মিত্র ও অংশীদারদের রাশিয়ার কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। পার্স টুডে, রয়টার্স।

সর্বশেষ খবর