রবিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
৪০ দেশে ওমিক্রন

আতঙ্কিত না হয়ে প্রস্তুত থাকতে বলল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

আতঙ্কিত না হয়ে প্রস্তুত থাকতে বলল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

কভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন এখন ৪০টি দেশে পৌঁছে গেছে। তবে এর সংক্রমণে কোনো দেশেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে বিশ্বের সব দেশকেই এর জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।

গত শুক্রবার রয়টার নেক্সট সম্মেলনে এ কথা বলেন সংস্থাটির প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৪০টি দেশে ওমিক্রন ছড়িয়েছে। তবে মিউটেশন বেশি হলেও এটা কতটা মারাত্মক তা এখনো স্পষ্ট নয়। ড. স্বামীনাথন বলেন, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট উচ্চ সংক্রমণশীল। সাউথ আফ্রিকায় এটি যে হারে ছড়াচ্ছে, তাতে ধারণা করা যায় যে, করোনার এ ভ্যারিয়েন্টই সবচেয়ে প্রভাবশালী হতে চলেছে। স্বামীনাথন দক্ষিণ আফ্রিকার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ওমিক্রনকে ‘অতি সংক্রামক’ অ্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ভ্যারিয়েন্টটি সম্ভবত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের অন্য সব ভ্যারিয়েন্টকে হটিয়ে নিজের  আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে, যদিও এ বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। বিশ্বজুড়ে এখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের ৯৯ শতাংশের দেহেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মিলছে। তিনি বলেন, ‘কতটা চিন্তিত হব আমরা? আমাদের সতর্ক এবং প্রস্তত থাকতে হবে, আতঙ্কিত নয়, কেন না এক বছর আগের তুলনায় আমরা এখন ভিন্ন পরিস্থিতিতে আছি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিষয়ক প্রধান মাইক রায়ান বলেছেন, কভিড মোকাবিলায় বিশ্বের হাতে এখন ‘খুবই কার্যকর ভ্যাকসিন’ আছে, এবং আরও ব্যাপকভাবে সেসব ভ্যাকসিন বিতরণের দিকেই সবার মনোযোগ থাকা উচিত। 

এদিকে এক খবরে বলা হয়েছে, ওমিক্রনের ভিতর ‘কমন কোল্ড’ তথা সাধারণ ফ্লুর কিছু জিনগত বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে। ক্যামব্রিজের গবেষক ভেনকি সৌন্দ্ররাজন জানান, ওমিক্রন নিজেকে ‘মানুষের উপযোগী’ করে গড়ে তুলেছে। যার কারণে এটি সহজে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও ফাঁকি দিতে পারছে। করোনার আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর সঙ্গে এটা একটা বড় অমিল। সৌন্দ্ররাজন আরও জানান, ওমিক্রনের মধ্যে কমন কোল্ডের পাশাপাশি এইচআইভিতে দেখা যায়- এমন জিনেটিক সিকোয়েন্সও দেখা গেছে। আর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি এইচআইভি রোগীর বাসও দক্ষিণ আফ্রিকায়।

খবরে বলা হচ্ছে, ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে প্রায় বাদবাকি বিশ্বের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে চললেও, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে এ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে এমন কিছু ব্যক্তির শরীরে, যারা কোথাও ভ্রমণই করেনি।

এদিকে গোটা দুনিয়া এখন ওমিক্রন নিয়ে চিন্তিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)-এর পরিচালক ড. রোশেলে ওয়ালেনস্কি শুক্রবার জানিয়েছেন, ওমিক্রন প্রভাবশালী ভ্যারিয়েন্ট হতে পারে, তবে আমাদের চিন্তা বেশি এখনো ডেলটা নিয়ে। কারণ হিসেবে ড. রোশেলে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এখন প্রতিদিন ৮৯ হাজার কভিড রোগী শনাক্ত হচ্ছে। যাদের ৯৯.৯ শতাংশই ডেলটায় আক্রান্ত।

এদিকে ওমিক্রন নিয়ে প্রাথমিক একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা। সেখানে দেখা গেছে, ডেলটা ও বেটা ধরনের তুলনায় ওমিক্রনের পুনরায় সংক্রমিত করার ক্ষমতা তিন গুণ বেশি। এ ছাড়া আগে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে গড়ে ওঠা প্রতিরোধব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার সক্ষমতা অমিক্রনের রয়েছে।

রেডক্রসের প্রধান ফ্রান্সেসকা রোকা বলছেন, বিশ্বব্যাপী টিকাদানের হারে বৈষম্যের কারণে কত বড় বিপদ আসতে পারে, ওমিক্রনের সংক্রমণ তার প্রমাণ।

দক্ষিণ আফ্রিকায় শিশুদের মধ্যে ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়ছে। দেশটির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর থেকে দেশটিতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির হার ঊর্ধ্বমুখী। তবে তারা বলছেন, কম বয়সীদের ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি বেশি, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

৪০ দেশে ওমিক্রন :  গত শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ৪০ দেশে শনাক্ত হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত এ ধরনে আক্রান্ত কারও মৃত্যু হয়নি। ব্যাপকভাবে জিনগত রূপ পরিবর্তনে সক্ষম এ ধরনের বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বব্যাপী নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। সবশেষ যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় স্থানীয়ভাবে ওমিক্রনে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। ওমিক্রনের প্রকোপে দক্ষিণ আফ্রিকায় মোট আক্রান্ত ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে।

ডব্লিউএইচও আরও জানায়, ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণে এখনো কোনো মৃত্যুর কথা তারা জানতে পারেনি। তবে  আগামী কয়েক মাসে ইউরোপে মোট কভিড সংক্রমণের অর্ধেকই হতে পারে ওমিক্রনের কারণে।

সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি।

সর্বশেষ খবর