শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
আফগানিস্তান পরিস্থিতি

মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ

মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ

গত আগস্টের ১৫ তারিখ আফগানিস্তান দখল করে তালেবান। তখন অনেকেই ধারণা করেছিলেন দেশটিতে নারী স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বিশেষ করে নারী শিক্ষায় বাধা আসতে পারে। সেই ধারণা এখন প্রায় সত্যি হতে চলেছে। মেয়েদের নিরাপত্তার উছিলা দেখিয়ে প্রথমে শুধু ছেলে শিক্ষার্থীদেরই স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল তালেবান সরকার। নিরাপত্তার ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে পারলেই মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে, এমনটাই তখন বলা হয়েছিল বিশ্ব মিডিয়ায়। কিন্তু, সেই নিরাপত্তার ব্যাপারটি যেন নিশ্চিতই করতে পারছে না তালেবান সরকার।

আফগানিস্তানের কিশোরী স্কুলছাত্রীরা স্কুলে যেতে না পারায় তাদের ক্রমবর্ধমান হতাশার কথা জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে। তালেবান দখলের কারণে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে স্কুলে ফিরতে পারছে না তারা।

১৫ বছর বয়সী মীনা বলেছে, ‘পড়াশোনা করতে না পারা মৃত্যুদণ্ডের মতো মনে হচ্ছে।’ উত্তর-পূর্ব বাদাখশান প্রদেশে তাদের স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে তার যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।

সম্প্রতি আফগানিস্তানের ১৩টি প্রদেশের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী ও প্রধান শিক্ষকদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিবিসি। এসব সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে স্কুলে যেতে না পারা শিক্ষার্থীদের মনোবেদনার কথা। তালেবানের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, খুব দ্রুতই শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শুরু করতে পারবে। তবে সে আশ্বাসের পর এখনো মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক স্কুলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় হতাশ শিক্ষার্থীরা। গত সেপ্টেম্বরে মাধ্যমিক পর্যায়ের ছেলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরত যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে তালেবান সরকার। তবে মেয়ে শিক্ষার্থীদের কথা উল্লেখ করেনি তারা। এখন শুধু প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতেই পড়তে পারছে মেয়ে শিশুরা।

১৬ বছর বয়সী লায়লা। বিবিসিকে জানায়, ‘গৃহস্থালির কাজ ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই... আমরা কেবল এক জায়গায় বসে থাকতে থাকতে নিথর হয়ে গেছি।’

এদিকে চলতি বছরের জুন থেকে শিক্ষকদের প্রায় কেউই বেতন পাননি। তারা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।

 

একজন শিক্ষক দাবি করেছেন, স্কুল বন্ধ থাকায় তার তিনজন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। কাবুলের একজন প্রধান শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা সত্যিই বিপর্যস্ত, তারা মানসিকভাবে ভুগছে। আমি তাদের আশা দেওয়ার চেষ্টা করছি, কিন্তু এটা কঠিন কারণ তারা এই মুহূর্তে অনেক দুঃখ ও হতাশার মুখোমুখি।’

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েদের স্কুলে ফেরার অনুমতি দেওয়া হলেও তাদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা। তাদের মতে, ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাজনিত কারণে পরিবারগুলো কম বয়সী মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চাচ্ছে না।

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারপ্রাপ্ত উপ-শিক্ষামন্ত্রী আবদুল হাকিম হেমাত বলেন, ‘নতুন বছরে নতুন শিক্ষানীতি অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হবে না।’

তিনটি ভিন্ন প্রদেশের প্রধান শিক্ষকরা জানান, তাদের স্কুলগুলো পুনরায় খোলার মাত্র এক দিনের মাথায়ই ‘কোনো কারণ দেখানো ছাড়া’ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। মেয়েরা প্রতিদিনই স্কুলের গেটে এসে জিজ্ঞাসা করত কখন তাদের স্কুলে ফিরতে দেওয়া হবে।

ডাক্তার কিংবা নার্স হওয়ার স্বপ্ন দেখে লায়লা। সে জানায়, তার স্কুলের জিনিসগুলো নিজের ঘরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রেখে দিয়েছে; সেগুলো কাউকে স্পর্শ করতে দেয় না সে। লায়লা সেই মুহূর্তের অপেক্ষায় আছে, যখন স্কুলের জিনিসগুলো আবারও সে ব্যবহার করতে পারবে। লায়লার ভাষায়, ‘আমি যখন দেখি আমার স্কুলের নতুন জামা-কাপড়, বই, স্কার্ফ ও জুতাগুলো ব্যবহার না হয়ে কেবল আলমারিতে পড়ে আছে, আমি খুবই বিরক্ত হই। আমি কখনই এভাবে বাড়িতে বসে থাকতে চাইনি।’

মীনা একজন সার্জন হতে চায়। কিন্তু সে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে কি না, তা এক বিশাল সংশয়।

গতবারের তালেবান শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১) দেশটির স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী শিক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। দক্ষিণ-পূর্ব গজনি প্রদেশের একজন প্রধান শিক্ষকের ভাষ্য অনুযায়ী, এবারের স্কুল বন্ধ হওয়ার ঘটনা ইতিমধ্যেই কিছু মেয়ের জীবনে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে।

সর্বশেষ খবর