শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

‘গুপ্ত’ সংস্করণের সন্ধান ফাইজারের টিকার সুরক্ষাও ভেদ করতে পারে ওমিক্রন

ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকার সুরক্ষাও ভেদ করতে পারে নতুন ধরন ওমিক্রন। পুরোটা নয়, সুরক্ষার আংশিক ভেদ করতে পারে এ ভাইরাস। গবেষকরা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের একটি লুকায়িত বা গুপ্ত সংস্করণ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। খবরে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনভাইরাসের নতুন ধরনটির   ওপর ফাইজারের টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রথম ল্যাব টেস্টের একটি ফলাফল বেরিয়ে এসেছে।

তাতে দেখা গেছে, ধরনটি এ টিকার সুরক্ষার আংশিক ভেদ করতে সক্ষম। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আশা করছে, করোনভাইরাসের যে টিকাগুলো এ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে, ওমিক্রনে আক্রান্তদের গুরুতর অসুস্থ হওয়া ঠেকাতেও সেসব টিকা কাজ করবে।

গবেষকরা বলছেন, ফাইজারের টিকায় শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি এমনিতে করোনাভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে যতটা কার্যকর, জিন কাঠামোয় অনেক বেশি বদলে যাওয়া ওমিক্রনের ক্ষেত্রে সেই হার বেশ কম। তাতে আতঙ্কিত না হয়ে বরং আশাবাদী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ডব্লিউএইচওর জরুরি বিভাগের পরিচালক ডা. মাইক রায়ান। তিনি বলছেন, টিকার সুরক্ষা ভেঙে ফেলার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের অন্য ধরনগুলোর চেয়ে ওমিক্রন বেশি সক্ষমতা রাখে- এমন কোনো লক্ষণও এ গবেষণায় দেখা যায়নি। ‘আমাদের হাতে থাকা টিকাগুলোর কার্যকারিতা বেশ ভালো। যদি গুরুতর অসুস্থ হওয়া থেকে সুরক্ষা বা হাসপাতালে যাওয়া এড়ানোর কথা বলি, তাহলে এ পর্যন্ত সবগুলো ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেই টিকাগুলোর কার্যকারিতা প্রমাণিত। ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও সেটা ঘটবে না, তেমন ভাবার কোনো কারণ এখনো ঘটেনি।’ 

ডা. রায়ান বলছেন, এ পর্যন্ত যে তথ্য-উপাত্ত তারা পেয়েছেন, তাতে ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে ডেল্টা বা অন্য ধরনগুলোর চেয়েও গুরুতর অসুস্থতা  তৈরি হওয়ার কোনো লক্ষণ তারা দেখেননি। বরং বলা যায়, এখন পর্যন্ত ওমিক্রনের ক্ষেত্রে অসুস্থতার মাত্রা কমই দেখা যাচ্ছে।

গুপ্ত সংস্করণের সন্ধান :  করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের একটি লুকায়িত বা গুপ্ত সংস্করণ শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাজ্যে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিনিয়ত শনাক্ত হওয়ার মধ্যেই এমন খবর এলো।

খবরে বলা হয়েছে, ওমিক্রনের সঙ্গে গুপ্ত সংস্করণটির অনেকগুলো মিউটেশনের মিল রয়েছে। কিন্তু এর নির্দিষ্ট জেনেটিক পরির্তনের অভাব আছে। এই নতুন সংস্করণটি এখন পর্যন্ত গতানুগতিক সব পরীক্ষায় করোনাভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। জিনোমিক পরীক্ষাতে ওমিক্রনের লুকায়িত সংস্করণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। তবে যেসব প্রচলিত পিসিআর টেস্টে দ্রুত শনাক্ত হয় তাতে এই সম্ভাব্য ভ্যারিয়েন্টটি চিহ্নিত হচ্ছে না।

একদল গবেষক বলেছেন, বিশ্বের অনেক দেশে করোনার যে স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়ছে একইভাবে ওমিক্রনের সম্ভাব্য ‘লুকায়িত’ সংস্করণটিও ছড়িয়ে পড়বে কি না তা দ্রত জানা প্রয়োজন। নতুন ধরনটি জিনগতভাবে স্বতন্ত্র এবং ভিন্ন আচরণের আশঙ্কা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গবেষণার জন্য গত কয়েক দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে করোনাভাইরাস নিয়ে যে জিনোম দেওয়া হয়েছিল এর মধ্যে থেকেই ওমিক্রনের ‘লুকায়িত’ সংস্করণটি ধরা পড়ে। এটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে যে সাতটি দেশে ওমিক্রনের ভ্যারিয়েন্টের নতুন ধরন পাওয়া গেছে এই তালিকায় যুক্তরাজ্য নেই।

ওমিক্রনের নতুন সংস্করণ আবিষ্কারের ফলে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। গবেষকরা বি.১.১.৫২৯ ধরন ওমিক্রনকে ‘বিএ.১’ এবং নতুন সংস্করণটিকে ‘বিএ.২.’ নামকরণ করেন। এ নিয়ে কথা বলেছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন জেনেটিক্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ফ্রাঁসোয়া ব্যালোক্স। তিনি বলেন, ওমিক্রনের দুটি বংশ দেখা যাচ্ছে। প্রথম ‘বিএ.১’ এবং অন্যটি ‘বিএ.২.’। এগুলোর মধ্যে জিনগতভাবে বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। সে ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন ভিন্ন আচরণও করতে পারে।

সর্বশেষ খবর