শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

হাবলকে ছুটি দিতে জেমস ওয়েব মহাশূন্যে যাচ্ছে আজ

হাবলকে ছুটি দিতে জেমস ওয়েব মহাশূন্যে যাচ্ছে আজ

এবারের ক্রিসমাস ডে-ই হয়ে উঠতে চলেছে সভ্যতার মহাকাশ অভিযানের ‘রেড লেটার্স ডে’। আজ বড়দিনেই মহাকাশে রওনা হচ্ছে সভ্যতা থেকে ব্রহ্মা  ফুঁড়ে দেখার সেরা ‘চোখ’। নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা গতকাল জানিয়েছে, আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ফরাসি গায়ানার কোরোউ থেকে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)-র বানানো অত্যন্ত শক্তিশালী ‘আরিয়ান-৫’ রকেটে চেপে মহাকাশে পাড়ি জমাবে মহাকাশে সভ্যতার পাঠানো সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ। ১৩৮০ কোটি বছর আগে হওয়া বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের পর ব্রহ্মা  কীভাবে তৈরি হয়েছিল, কীভাবে তৈরি হয়েছিল প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের তারাগুলো, কীভাবে তৈরি হয়েছিল ছায়াপথগুলো (‘গ্যালাক্সি’) বা ছায়াপথগুলোর ঝাঁক (‘গ্যালাক্সি ক্লাস্টার’), তা জানতে ও বুঝতেই মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে এবার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপকে। যা ব্রহ্মান্ডের ১৩০০ কোটি বছরের ইতিহাসকে চাক্ষুষ করতে পারবে। খুঁড়ে বার করতে পারবে ব্রহ্মান্ডের জন্ম ও তার বিকাশের ইতিহাস। তার ক্রমবিবর্তনেরও। তিন দশক আগে একই উদ্দেশ্যে নাসা মহাকাশে পাঠিয়েছিল হাবল স্পেস টেলিস্কোপকে। গত শতাব্দীর নয়ের দশকের গোড়ায়। যা এখনো দাপটে কাজ করে চলেছে মহাকাশে। তবে ব্রহ্মান্ডের ১২০০ কোটি বছরের বেশি ইতিহাস খুঁড়ে দেখার ক্ষমতা নেই হাবল টেলিস্কোপের। তাই জেমস ওয়েবকে মহাকাশে পাঠানোর খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বিজ্ঞানীদের। উৎক্ষেপণের পর দ্বিতীয় সপ্তাহে টেলিস্কোপের সুবিশাল আয়না খুলে যাবে। তার ছয় মাস পর থেকে ব্রহ্মা কে খুঁড়ে দেখার কাজে নামবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।

সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ওয়েবকে অত্যন্ত শীতল অবস্থায় রাখতে হবে এবং যে অতিসূক্ষ্ম, দুর্বল সংকেতগুলো গ্রহণের জন্য এটিকে প্রস্তুত করা হয়েছে, সেই সংকেতগুলোকে বিনষ্টকারী সৌরজগতের অন্যান্য বস্তুর (মূলত সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের) আলোকীয় ও তাপীয় বিকিরণের কারণে সৃষ্ট অনাকাক্সিক্ষত ব্যতিচার থেকে এটিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। এ কারণে এটিকে পৃথিবী থেকে বহুদূরে, পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বেরও প্রায় ৪ গুণ দূরে, প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরত্বে, দ্বিতীয় লাগ্রঁজীয় বিন্দুতে মোতায়েন করা হবে। সেই তুলনায় হাবল দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি পৃথিবী থেকে মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত; ফলে একবার মোতায়েন করার পরে মানুষের হাতে ওয়েবের কোনো মেরামতি করা প্রায় অসম্ভব। এ ছাড়া যন্ত্রটিকে সূর্যের তাপ থেকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য ১৫০ বর্গমিটার ক্ষেত্রফলের একটি সৌরঢাল মোতায়েন করা হবে। সৌরঢালটি সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়ামে আবৃত পাঁচটি তাপ-অন্তরক ক্যাপটন পাত (বিশেষ ধরনের পলিথিনের মতো পাতলা পলিইমাইড ঝিল্লি) দিয়ে নির্মিত, যা যন্ত্রটির দর্পণ ও অন্য যন্ত্রাংশগুলোর তাপমাত্রা ৫০ কেলভিনের নিচে (শূন্যের নিচে ২২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রাখতে সাহায্য করবে। সমগ্র মোতায়েন প্রক্রিয়াটি শেষ করতে উৎক্ষেপণ মুহূর্ত থেকে প্রায় ছয় মাস লাগবে; ২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি পৃথিবীতে বৈজ্ঞানিক উপাত্ত প্রেরণ শুরু করবে।

সর্বশেষ খবর