সোমবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ইউক্রেনে মস্কোপন্থি সরকার বসলেই সমাধান!

সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য ইয়েভেন মুরায়েভই হচ্ছেন ক্রেমলিনের পছন্দের সেই ব্যক্তি- যাকে রাশিয়া ইউক্রেনে ক্ষমতায় বসাতে চায়

ইউক্রেন নিয়ে কার্যত যুদ্ধংদেহী অবস্থানে রাশিয়া ও আমেরিকা। ইউরোপের অন্য দেশগুলোও আমেরিকার পক্ষে। এই নিয়ে দেশগুলোর নেতারা দফায় দফায় বসছেন আলোচনায়। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য অভিযোগ করেছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে একজন মস্কোপন্থি ব্যক্তিকে ইউক্রেনের সরকারপ্রধান হিসেবে ক্ষমতায় বসানোর পরিকল্পনা করছে। ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাশিয়ার পছন্দের ব্যক্তিটির নামও প্রকাশ করেছে- যা বেশ অস্বাভাবিক এক ঘটনা। বলা হচ্ছে সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য ইয়েভেন মুরায়েভই হচ্ছেন ক্রেমলিনের পছন্দের সেই ব্যক্তি- যাকে রাশিয়া ইউক্রেনে ক্ষমতায় বসাতে চায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, আর এটি ঘটলেই বর্তমান উত্তেজনার উপসম ঘটবে। রাশিয়া এখন ইউক্রেনের সীমান্তে এক লাখেরও বেশি সেনা মোতায়েন করেছে। তবে রাশিয়া ইউক্রেনের ভিতরে ঢুকে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে- এমন কথা মস্কো অস্বীকার করেছে। এদিকে পুতিন পাল্টা অভিযোগ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করার চেষ্টা করছে। আর যদি তা হয় তাহলে বিষয়টিকে ভালোভাবে নেবে না রাশিয়া। মস্কো দাবি জানিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর এ গ্যারান্টি দিতে হবে যে ইউক্রেনকে কখনই ন্যাটোর সদস্য করা হবে না। যুক্তরাষ্ট্র এ রকম কোনো অঙ্গীকার করতে অস্বীকার করেছে। কিন্তু পশ্চিমা ও ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ২০২২ সালের প্রথম দিকেই কোনো এক সময় রাশিয়া অভিযান চালাতে পারে।

কে এই মুরায়েভ? মুরায়েভ একটি সংবাদমাধ্যমের মালিক এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে তার পার্টি ৫% এর কম ভোট পাওয়ায় তিনি ইউক্রেনের পার্লামেন্টে তার সদস্য পদ হারান। এদিকে ইয়েভেন মুরায়েভ তিনি অবশ্য নিজেই অবজারভার পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, তার কাছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরকে ‘বিভ্রান্ত’ বলে মনে হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ‘এসব কথা খুব একটা যৌক্তিক নয়। আমাকে রাশিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেখানে আমার পিতার প্রতিষ্ঠানের যে অর্থ আছে- তাও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’ কিন্তু যুক্তরাজ্যে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভাদিম প্রিস্টাইকো বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন রাশিয়া একজন মস্কোপন্থি নেতাকে ইউক্রেনের ক্ষমতায় বসাতে চাইছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর আরও চারজন ইউক্রেনীয় রাজনীতিবিদের নাম প্রকাশ করেছে যারা তাদের ভাষায় রুশ গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।

ইউক্রেনে আমেরিকান অস্ত্রের চালান : রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলায় ইউক্রেনকে ৯০ টন পরিমাণ সামরিক সাহায্য পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট বাইডেন গত ডিসেম্বরে ইউক্রেনকে ২০ কোটি ডলারের যে নতুন সামরিক সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন- এটি হচ্ছে তার আওতায় পাঠানো প্রথম চালান। কিয়েভে মার্কিন দূতাবাস বলছে, এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সামনের কাতারের সদস্যদের জন্য গোলাবারুদ- যা রাশিয়া কোনো অভিযান চালালে তার মোকাবিলায় ব্যবহৃত হবে।

ভ্লাদিমির পুতিন কী চান? রুশ প্রেসিডেন্ট বহু দিন ধরেই দাবি করে আসছেন যে ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের কাছে একটা নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে ন্যাটো জোটকে পূর্ব দিকে আর সম্প্রসারণ করা হবে না, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সেই অঙ্গীকার রক্ষা করেনি। সে সময় থেকে এ পর্যন্ত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন বা তার প্রভাব-বলয়ের অংশ ছিল- এমন অনেক পূর্ব ইউরোপিয়ান দেশ ন্যাটো জোটের সদস্য হয়েছে। এর মধ্যে পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাৎভিয়া এবং এস্তোনিয়ার সরাসরি সীমান্ত রয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে। পুতিন চান, পশ্চিমা দেশগুলোকে এ প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে ইউক্রেনকে কখনো ন্যাটো সদস্য করা হবে না এবং পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর অস্ত্রশস্ত্র দেওয়া ও সামরিক মহড়া চালানো বন্ধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের কোনো অঙ্গীকার করতে অস্বীকার করেছে। বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ খবর