মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ইউক্রেন নিয়ে যুদ্ধের ইঙ্গিত

ইউক্রেন নিয়ে যুদ্ধের ইঙ্গিত

সীমান্তে রুশ বাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন একজন ইউক্রেনের সেনাসদস্য -এএফপি

মার্কিন প্রশাসনের আশঙ্কা, ইউক্রেনে দ্রুত হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। কয়েক দফায় রাশিয়া ও মার্কিন প্রতিনিধিদের আলোচনায় তাই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেশটির দূতাবাস থেকে কর্মীদের সরিয়ে নিচ্ছে আমেরিকা। একইসঙ্গে ইউক্রেনের বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সে দেশে নাগরিকদের সফর না করার উপদেশ দিয়েছে কিয়েভের মার্কিন দূতাবাস। এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ইউক্রেনকে চেচনিয়া ভাবছে রাশিয়া। আর এই ভেবে যদি ইউক্রেনে আক্রমণ হয় তাহলে এর পরিণতি খুবই খারাপ হবে।

বিগত কয়েক মাস ধরেই পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো জোটের প্রভাব বিস্তার নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে রাশিয়া। সম্প্রতি, আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক গোষ্ঠীটিতে কিয়েভের যোগ দেওয়ার জল্পনার পর থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে দ্রুত সেনা মোতায়েন করেছে মস্কো। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে মিলেছে আসন্ন যুদ্ধের ইঙ্গিত! এহেন পরিস্থিতিতে কিয়েভের পাশে দাঁড়িয়েছে ব্রিটেন ও কানাডা। রুশ বাহিনীকে রুখতে ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের হাতে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল তুলে দিয়েছে ব্রিটেন। শুধু তাই নয়, ইউক্রেনের সেনাকে উৎসাহ দিতে বিশেষ কমান্ডো বাহিনী পাঠিয়েছে কানাডা। রবিবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রুশ বাহিনীর হামলার আশঙ্কায় কিয়েভের দূতাবাসে কর্মী সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে। শুধু অত্যন্ত জরুরি কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরাই সেখানে থাকবেন। এদিকে, দূতাবাস থেকে কর্মী সংখ্যা কমিয়ে আনার পাশাপাশি ইউক্রেন ও রাশিয়ায় নাগরিকদের ভ্রমণ না করার সতর্কবার্তাও দিয়েছে আমেরিকা। মনে করা হচ্ছে, রাশিয়ার হামলার আশঙ্কায় দেশটিতে উত্তেজনা ও অশান্তি দেখা দিতে পারে।

যুদ্ধজাহাজ-রণতরী নিয়ে প্রস্তুত ন্যাটো : রুশ সেনা উপস্থিতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে গতকাল পশ্চিম উপকূলে আরও রণতরী ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের খবর নিশ্চিত করেছে ন্যাটো।

পাশাপাশি ন্যাটোবাহিনীও রয়েছে সতর্ক অবস্থানে। সংস্থাটির এ কর্মকান্ড ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইউক্রেনে রাশিয়া কোনো ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপ করলে পশ্চিমা বিশ্বও আগ্রাসী জবাব দিতে প্রস্তুত। তবে ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর কোনো ইচ্ছা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে রাশিয়া।

ন্যাটোতে যোগ দেওয়া মিত্রবাহিনীকে স্বাগত জানিয়ে পশ্চিমা সামরিক জোটের মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ এক বিবৃতিতে বলেন, ন্যাটো জোটের পূর্বাঞ্চলীয় অংশকে শক্তিশালী করাসহ ন্যাটোর মিত্রদের রক্ষা ও রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা চালিয়ে যাবে।

ইউক্রেনের সঙ্গে ৪ হাজার মাইলেরও বেশি সীমান্তজুড়েই সেনা মোতায়েন করেছে মস্কো। যুদ্ধ ট্যাঙ্ক, সেনাদল আর অন্যান্য সামরিক যান নিয়ে ভূমধ্যসাগরের দিক থেকে এগিয়ে আসছে ছয়টি রুশ যুদ্ধজাহাজ। প্রস্তুত রয়েছে শত শত যুদ্ধবিমানও। এখন শুধু প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশের অপেক্ষা মাত্র। সংকেত পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী। সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে পুরোপুরি প্রস্তুত ইউক্রেনও। এদিকে মস্কোর বিরুদ্ধে আবারও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে পশ্চিম। বলেছে, হামলা চালানোর কয়েক দিনের মধ্যেই রাশিয়ার ওপর সম্মিলিতভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।

পিছিয়ে নেই ইউক্রেনও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা বাড়িয়েছে। গত সপ্তাহেই ব্রিটেন ২ হাজারের বেশি পরবর্তী প্রজন্মের হালকা অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক লঞ্চার পাঠিয়েছে এবং প্রশিক্ষক হিসেবে একটি নতুন রেঞ্জার রেজিমেন্ট থেকে প্রায় আড়াই ডজন সেনা পাঠিয়েছে। প্রতিবেশী দেশ এস্তোনিয়া বলেছে, তারা ইউক্রেনকে জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল দেবে। আর স্টিংগার অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল পাঠাবে লিথুয়ানিয়া এবং লাটভিয়া। নেদারল্যান্ডসও জানিয়েছে তারা ইউক্রেনকে প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র সরবরাহ করতে প্রস্তুত।

এমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে যা রাশিয়া আগে কখনো দেখেনি : গতকাল ন্যাটো সদস্য ডেনমার্ক জানিয়েছে, ইইউ এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপে প্রস্তুত রয়েছে, যা রাশিয়া আগে কখনো দেখেনি। রয়টার্স জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলছেন, তারা ঐক্যবদ্ধভাবে মস্কোকে একটি সতর্ক বার্তা পাঠাবেন।

নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে রাশিয়ার কোন কোন খাতকে টার্গেট করা হবে; তা নিয়ে অবশ্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ডেনিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর