বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ন্যাটোকে কেন বিশ্বাস করে না রাশিয়া

ন্যাটো একটি সামরিক জোট। ১৯৪৯ সালে যাত্রা শুরু। সদস্য দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি কোন দেশের ওপর হামলা হলে তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে

ইউক্রেন হলো সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র। এখন প্রতিবেশী দেশ। এটি মার্কিন নিয়ন্ত্রণাধীন ন্যাটোর সদস্য নয়। তবে এটি ন্যাটোর ‘সহযোগী’ দেশ। আর সহযোগী দেশ হওয়ার মানে হলো ভবিষ্যতে কখনো ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। আর এমনটা হতে দিতে চায় না রাশিয়া। ইউক্রেন যেন ন্যাটোতে যোগ দিতে না পারে, সে ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে নিশ্চয়তা চায় ক্রেমলিন। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্ব সে আশ্বাস দিতে চায় না।

ন্যাটো হলো একটি সামরিক জোট। ১৯৪৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ ১২টি দেশ নিয়ে সামরিক জোট ন্যাটোর যাত্রা শুরু। দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কোনো সদস্যদেশের ওপর সশস্ত্র হামলা হলে তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। বর্তমান এর সদস্য রাষ্ট্র ৩০টি। ইউক্রেনে রাশিয়ার বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক মানুষের বসবাস। রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনও বেশ নিবিড়। কৌশলগতভাবে ইউক্রেনকে নিজেদের বাড়ির আঙিনার মতোই সংলগ্ন মনে করে রাশিয়া। মস্কোর অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর মিত্ররা ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করছে এবং যৌথ মহড়া চালাচ্ছে। এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে ইউক্রেনের সরকারপন্থিরা জোরপূর্বক বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকার দখল নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। রাশিয়ার আশঙ্কা, ন্যাটোর কিছুসংখ্যক সদস্যদেশ ইউক্রেনে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে পারে। আর তাতে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ না দিলেও ওই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার সুযোগ পাবে জোটটি। প্রেসিডেন্ট পুতিন দাবি করে আসছেন, ন্যাটো জোটকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে পশ্চিমা বিশ্ব। তিনি চান পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো তাদের কর্মকান্ড বন্ধ করে দিক। পুতিন দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে যাচ্ছেন, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো বিস্তার ঘটাবে না বলে ১৯৯০ সালে দেওয়া একটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ন্যাটো রাশিয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। জোটটি বলছে, তাদের সদস্যদেশগুলোর অল্প কয়েকটির সঙ্গে রাশিয়ার সীমানা রয়েছে। নিজেদের আত্মরক্ষামূলক জোট হিসেবে উল্লেখ করেছে ন্যাটো। অনেকের বিশ্বাস, নিজেদের নিরাপত্তামূলক দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টায় ইউক্রেন সীমান্তে সেনা উপস্থিতি বাড়াচ্ছে রাশিয়া। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেনে হামলা চালালে ফল ভালো হবে না। বসে থাকবে না আমেরিকা। এতে বেজে যাবে যুদ্ধ। আর তা হলে দুনিয়া বদলে যাবে।

এই মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিগত কয়েকদিন ধরেই ইউক্রেন ও বেলারুশ সীমান্তে সেনার সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে রাশিয়া। ন্যাটো সামরিক জোটে কিয়েভকে যেন কোনোভাবেই জায়গা দেওয়া না হয় সেই দাবি জানিয়েছে মস্কো। পাশাপাশি, পূর্ব ইউরোপের একাধিক ঘাঁটি থেকে সেনা সরাতে হবে আমেরিকা ও ন্যাটো জোটকে বলে দাবি করেছে তারা। বিশ্লেষকদের মতে, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণে উদ্বিগ্ন মস্কো। এবার আমেরিকার নেতৃত্বে ওই সামরিক জোটে ইউক্রেন যোগ দিলে, রাশিয়ার সীমান্তের কাছে এসে পড়বে বিরোধী শিবির। তাই প্রতিরক্ষার কৌশলগত কারণেই ইউক্রেন দখল করে পূর্ব ইউরোপ ও নিজেদের মধ্যে রকটি ‘বাফার জোন’ তৈরি করতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফলে ইউক্রেন নিয়ে যুদ্ধংদেহী অবস্থায় অবস্থান করছে আমেরিকা ও রাশিয়া।

এ অবস্থায় গতকাল ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হুমকির সুরে স্পষ্ট বলেছেন ইউক্রেনে যদি রাশিয়া হামলা চালায় তাহলে ‘দুনিয়া বদলে যাবে’। মস্কোর ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করার ইঙ্গিতও দেন তিনি। বলে রাখা ভালো, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া। তারপর মস্কোর ওপর একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা জারি করে ওয়াশিংটন। এবার এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রুশ বাহিনীর হামলায় কিয়েভ বিপন্ন হলে খোদ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে।

ন্যাটোকে কেন বিশ্বাস করে না রাশিয়া : ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা হওয়ার আশঙ্কায় ইতোমধ্যে কিয়েভের প্রতি সমর্থন জোরালো করেছে সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো। ইউক্রেনে অতিরিক্ত সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে তারা। এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন দাবি করে আসছেন, ন্যাটো জোটকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে পশ্চিমা বিশ্ব। তিনি চান পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো তাদের কর্মকান্ড বন্ধ করে দিক। পুতিন দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে যাচ্ছেন, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো বিস্তার ঘটাবে না বলে ১৯৯০ সালে দেওয়া একটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ন্যাটোকে বিশ্বাস করে না রাশিয়া। অবশ্য ন্যাটো রাশিয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। জোটটি বলছে, তাদের সদস্য দেশগুলোর অল্প কয়েকটির সঙ্গে রাশিয়ার সীমানা রয়েছে। নিজেদের আত্মরক্ষামূলক জোট হিসেবে উল্লেখ করেছে ন্যাটো।

ইউক্রেইনের সীমান্তের কাছে প্রচুর সৈন্য এনে জড়ো করছে রাশিয়া, এর প্রতিক্রিয়ায় নেটো সামরিক জোট পূর্ব ইউরোপে আরও জাহাজ ও জঙ্গি বিমান মোতায়েন করে নিজেদের শক্তি বাড়িয়েছে এবং তাদের বাহিনীগুলোকে সতর্ক অবস্থায় রেখেছে; এই পরিস্থিতিতেই মঙ্গলবার বিরল এ নিষেধাজ্ঞার হুমকি এল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রাশিয়া কোনো আক্রমণের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে উল্টো অভিযোগ করে বলেছে, নেটো ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পদক্ষেপেই এ সংকট শুরু হয়েছে। ইউক্রেইনকে কখনোই নেটো জোটে নেওয়া হবে না, এমন দাবিসহ পশ্চিমের কাছে নিরাপত্তা বিষয়ক বেশ কিছু নিশ্চয়তা চেয়েছে রাশিয়া। মস্কো সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ইউক্রেইনকে নেটো ও রাশিয়ার মধ্যে একটি ‘বাফার জোন’ হিসেবে বিবেচনা করে। ইউক্রেইন নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা হলেও তাতে সৃষ্ট উত্তেজনা কমেনি।

সর্বশেষ খবর