বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম রয়েছে সুইস ব্যাংকের। হিসাবের পাশাপাশি হিসাবধারীর পরিচয় এবং অন্য যে কোনো তথ্যের সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো। কিন্তু সেই সুইস ব্যাংকের ১৮ হাজারের বেশি হিসাবের নথি ফাঁস হয়েছে। যেখানে অর্থের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি ডলার। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে অন্য অনেকের সঙ্গে উঠে এসেছে জর্ডানের বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, মিসরের সাবেক শাসক হোসনি মুবারকের ছেলেদের নাম।
কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে আইকনিক ব্যাংকগুলোর অন্যতম ক্রেডিট সুইস থেকে বিপুল পরিমাণ ব্যতিক্রমী ডাটা ফাঁস হওয়ায় গোটা বিশ্বেই চাঞ্চ্যলের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, নিষেধাজ্ঞায় থাকা ব্যবসায়ী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী এবং আরও অনেকের শত শত কোটি ডলার কীভাবে তাদের কাছে জমা রেখেছে তা প্রকাশ হয়ে গেছে।স্বঘোষিত এক হুইসেলব্লোয়ার ওই ব্যাংকের কমপক্ষে ১৮ হাজার অ্যাকাউন্ট ফাঁস করে দিয়েছেন। এসব অ্যাকাউন্টে সব মিলে জমা আছে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি ডলার। এমন হিসাব জার্মান পত্রিকা সুডয়েচে জিতাং-এর। ওই পত্রিকাটি সাংবাদিকদের অলাভজনক গ্রুপ-অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট এবং বিশ্বের অন্য ৪৬টি সংবাদভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার করেছে এসব ডাটা। এর মধ্যে আছে নিউইয়র্ক টাইমস। ফাঁস হওয়া অ্যাকাউন্টগুলো ১৯৪০-এর দশকে শুরু হয়ে ২০১০-এর দশক পর্যন্ত খোলা হয়েছে। গার্ডিয়ান জানায়, ফাঁস হওয়া এসব নথির মধ্যে ১৯৪০-এর দশক থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত তথ্য রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টের ৩০ হাজারের বেশি মালিকের মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ক্রেডিট সুইসের ১৫ লাখ গ্রাহকের মধ্যে কেবল একটি অংশের তথ্যই এসেছে ফাঁস হওয়া নথিতে। এসব অ্যাকাউন্টের মালিকদের অনেকে ইতোমধ্যেই মারা গেছেন, অনেক অ্যাকাউন্ট বন্ধও হয়ে গেছে। অনেক অ্যাকাউন্ট এখনো চালু রয়েছে। এই তালিকায় পাকিস্তানের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান, যিনি ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত কোটি ডলার আফগানিস্তানের মুজাহিদীনদের পাঠিয়েছিলেন।
সুইস সিক্রেটস অনুসন্ধানে আরও অন্তত ৪০ জনের নাম পেয়েছেন সাংবাদিকরা, যারা বিভিন্ন সময়ে ডজনখানেক দেশের গোয়েন্দা দফতরের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এদের মধ্যে ভেনেজুয়েলার সাবেক আর্মি ক্যাপ্টেন কার্লোস লুই অ্যাগুইলেরা বোর্হাস, ইউক্রেনের সিকিউরিটি সার্ভিসের সাবেক প্রধান ভ্যালেরি খোরশকোভস্কি, মিসরের সাবেক গুপ্তচর আশরাফ মারওয়ানের নাম রয়েছে। এ ছাড়া ভেনেজুয়েলা, ইউক্রেন, জার্মানি, নাইজেরিয়া, উজবেকিস্তান, ইরাক, জর্ডান, ইয়েমেনের বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার নামও উঠে এসেছে।
তবে তথ্য ফাঁস হওয়ার পরও এই দায় নিতে রাজি নয় ব্যাংকগুলো। ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের মুখপাত্র ক্যান্ডিস সান বিবৃতিতে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ জোর দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সঙ্গে ব্যাংকের অনুমেয় ব্যবসায়িক চর্চা সম্পর্কে ধারণাও প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। আরও বলেছেন, এসব অ্যাকাউন্টের বহু, কয়েক দশক আগের। এটা এমন এক সময়ের, যখন আইন, আইনি চর্চা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশা এখনকার চেয়ে অনেক বেশি ভিন্ন ছিল। ক্যান্ডিস সান বলেন, সুনির্দিষ্ট ক্লায়েন্টদের সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে পারে না ক্রেডিট সুইস।