মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা মামলার শুনানিতে সু চির বদলে অ্যাটর্নি

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলায় জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের সামরিক জান্তার তোলা আপত্তির ওপর গণশুনানি শুরু হয়েছে। ওই মামলাটি করেছিল আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। ২০১৯ সালে এর শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন অং সান সু চি। তিনি এখন বার্মিজ জান্তার কারাগারে বন্দি। তবে গতকালের কার্যক্রমে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর বদলে থাকবেন বর্তমান আন্তর্জাতিক সহায়তা মন্ত্রী। তবে এ দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মিয়ানমারের অ্যাটর্নি জেনারেল থিডা ও।

মহামারি পরিস্থিতিতে গতকাল সন্ধ্যায় নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেসে মিশ্র পদ্ধতিতে এ শুনানি হয়। আদালতের কিছু সদস্য গ্রেট হল অব জাস্টিসে উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। এবারের শুনানি চলবে চার দিন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে বর্তমান জান্তা। এ সরকার জাতিসংঘের স্বীকৃতি না পেলেও তাদের ঠিক করে দেওয়া আট সদস্যের দল আইসিজেতে লড়ছে। মিয়ানমারের জান্তার প্রতিনিধি এ শুনানিতে লড়াইয়ের সুযোগ পাওয়ায় ওই সরকার কিছুটা কূটনৈতিক বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে কি না সে প্রশ্ন তুলেছেন অধিকার কর্মীরা। তবে আইসিজের তরফ থেকে গণশুনানি এগিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে গণহত্যার অভিযোগ এনে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার করা এ মামলার বিচারে আইসিজের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করেছে মিয়ানমারের জান্তা। এবারের গণশুনানি হচ্ছে মূলত মিয়ানমারের সেই আপত্তির ওপর।

এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে অভিযোগকারী গাম্বিয়া ও অভিযুক্ত মিয়ানমারকে তাদের আইনি যুক্তি দাখিলের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিল আইসিজে।

আইসিজেতে মামলা হলে আদালতের সিদ্ধান্ত মানার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে সদস্য দেশগুলোর ওপর। আর সে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। তবে সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করার কোনো ক্ষমতা নেই এ আদালতের। সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করারও বহু উদাহরণ রয়েছে।

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে জাতিসংঘের এ সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায় আসতে কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে।

বিরোধীদের সঙ্গে না বসতে আসিয়ানের প্রতি আহ্বান মিয়ানমার জান্তার : মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধিতাকারীদের ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ তকমা দিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত না হতে আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের বিশেষ দূতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির জান্তা সরকার। গতকাল রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। মিয়ানমারে রক্তপাত বন্ধের পাশাপাশি শান্তি ফেরাতে গত বছর পাঁচ দফা ঘোষণা প্রকাশ করে আসিয়ান। এ ঘোষণা বাস্তবায়নের ব্যাপারে রাজি হয় মিয়ানমারের জান্তা। কিন্তু মিয়ানমারে আসিয়ানের পাঁচ দফা ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। এ নিয়ে জোটের ওপর চাপ রয়েছে।

মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য আসিয়ানের বিশেষ দূতের প্রতি আহ্বান জানায় মালয়েশিয়া। মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সদস্য ও অন্য জান্তাবিরোধীদের নিয়ে এই এনইউজি গঠিত। এটি মিয়ানমারের ‘ছায়া সরকার’ নামে পরিচিত। এনইউজির প্রধানতম লক্ষ্য মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফেরানো ও রাজবন্দিদের মুক্তি দেওয়া।

কিন্তু মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব গোষ্ঠীর (জান্তাবিরোধী) সঙ্গে বিশেষ দূতের আলোচনা বা সাক্ষাৎ করাটা আসিয়ান সনদের নীতির পরিপন্থী। একই সঙ্গে তা আসিয়ান জোটের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকেও ক্ষুণ্ন করে।

সর্বশেষ খবর