বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

উসকানি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের

উসকানি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের

সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন আলবার্ট আইনস্টাইন। তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দুটোই দেখেছেন। তবে তিনি মন্তব্য করেছেন চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে। তাঁর মন্তব্য ছিল যদি চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ হয় তা হলে তা হবে পাথর ও লাঠি দিয়ে। তিনি কিন্তু মাঝখান থেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বাদ দিয়েছেন। কিন্তু কেন? আইনস্টাইনের এই বিখ্যাত উক্তি বারবার সতর্ক করেছে সভ্যতাকে। অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত পৃথিবীর তাবড় দেশগুলো যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধায় তাহলে তাতেই ঘনিয়ে আসবে মানুষের অন্তিমকাল। কারণ তাতে যে ব্যবহার হবে পারমাণবিক ও নাইড্রোজেন বোমার। আইনস্টাইনের কথার কথার জের ধরেই হয়তো রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বছর কয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ হলে কেউ কিছুক্ষণ পর  জীবিত থেকে দাবি করতে পারবে না আমরা জয়ী।’ সেই কথাই হয়তো বাস্তবায়ন হতে চলেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ গতকাল হুঁশিয়ারি দিলেন, যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধে, তবে তা হবে পরমাণু যুদ্ধ ও ধ্বংসাত্মক। রয়টার্স জানিয়েছে, এই পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন সারা বিশ্বেরই শান্তিকামী মানুষ। ল্যাভরভের দাবি, ইউক্রেনের ওপর তাঁরা যে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছেন, তার পাল্টা হিসেবে কিয়েভ যদি মস্কোর বাহিনীর     বিরুদ্ধে পারমাণবিক হাতিয়ার ব্যবহার করে, তাহলে তার ফল হবে মারাত্মক।

অতীতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ভয়াবহ রূপ দেখেছে গোটা বিশ্ব। হিরোশিমা, নাগাসাকির ভয়ঙ্কর স্মৃতি আজও ভোলেনি দুনিয়া। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক স্তরে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। তারপরও পারমাণবিক হাতিয়ার ব্যবহারের সম্ভাবনা পুরোপুরি দূর করা যায়নি। তার প্রধান কারণই হলো, যে সব দেশ প্রকাশ্যে পারমাণবিক অস্ত্র বর্জনের কথা বলে, বাস্তবে তাদের সবার কাছেই এই প্রযুক্তি মজুদ রয়েছে। আর চীন, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলো তো এই বিষয়ে বাকি বিশ্বের মতামত নেওয়ার প্রয়োজনটুকুও মনে করে না। নিজেদের ইচ্ছা মাফিক মাঝে মধ্যেই এসব অস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করে তারা।

এর আগে, রাশিয়ার অন্যতম সহযোগী বেলারুশ প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, ইউক্রেনে যুদ্ধের আবহে পশ্চিমের কোনো দেশ তাদের ওপর হামলা চালালে তার ফল ভালো হবে না! প্রয়োজনে শত্রুদের বিরুদ্ধে পারমাণবিক হাতিয়ার তুলে নিতেও পিছপা হবে না তারা!

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ পার করছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এখনো তা থামার কোনো লক্ষণ নেই। একবার সমঝোতা বৈঠক হয়েছে। তা নিষ্ফল হওয়ার পরে দ্বিতীয় বৈঠক হওয়ার কথা গতকাল। কিন্তু এবারের বৈঠকে সমাধান মিলবে সেই সম্ভাবনাও কমই, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ রাশিয়া দাবি করেছে ইউক্রেন কোনোভাবেই ন্যাটোর সদস্য হতে পারে না। আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যুদ্ধের মধ্যেই বারবার ন্যাটো নেতাদের আহ্বান জানাচ্ছেন তার দেশকে এই সংস্থার সদস্য করা হোক। শুধু তাই নয়। মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকেও অনলাইনেও ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। আর এটা যদি হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে নিঃসন্দেহে। বেশ   কিছুটা চাপে পড়বে রাশিয়া। নতুন মোড় নেবে  রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত।

সর্বশেষ খবর