শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

ভারতকে বাগাতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র

ভারতকে বাগাতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর বিশ্ব এখন দুই ভাগে বিভক্ত। যার এক পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই মুহূর্তে তার পাশে পাচ্ছে না চীনকে। ফলে ভারতকে বাগাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। তাই তো মার্কিন ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইসার দলীপ সিং দিল্লি এসে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলাসহ ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সেখানে ঘুরেফিরে চীনা-জুজুর কথাই এসেছে। দলীপ সিং ভারতীয় কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে এখন ‘নো লিমিট পার্টনারশিপ’ হয়েছে। তাই চীন যদি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) পেরোয়, তাহলে রাশিয়া ভারতের পক্ষে আসবে না। অর্থাৎ ভারতের দুর্দিনে রাশিয়া কোনো সাহায্য করবে না। তাই রাশিয়ার পক্ষে না যাওয়াটাই ভালো। এই সহজ সত্য যেন দিল্লি মাথায় রাখে।

সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জানিয়েছিলেন, রাশিয়া এবং চীনের সম্পর্ক ‘শর্তহীন’। সেই কথার রেশ টেনেই দলীপ বলেছেন, ‘চীন যদি ভারত আক্রমণ করে, তাহলে রাশিয়া বাঁচাতে আসবে না।’ রাশিয়া এবং চীনের সম্পর্কে বেশি জোর ফলাবে চীন, এমনটাই দাবি করেছেন মার্কিন প্রতিনিধি। বিশ্বে গণতন্ত্র বজায় রাখার উদ্দেশে রাশিয়ার আগ্রাসনকে থামানো দরকার, সেই কারণেই বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে ভøাদিমির পুতিনের দেশের ওপর- এমনটাই জানিয়েছেন দলীপ।

দলীপ সিং রাশিয়ার সঙ্গে তেল বাণিজ্য নিয়েও একটু হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বলেছে, ভারত যে রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, তাতে আমেরিকার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সেটা সীমার মধ্যে থেকে যেন কেনা হয়। সীমার মধ্যে মানে অন্যান্য বছর যে পরিমাণ তেল রাশিয়া থেকে ভারত কেনে, তার মধ্যে থাকা। সামান্য কম-বেশি হলে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু রাশিয়া থেকে ভারত যেন বিপুল পরিমাণ তেল না কেনে। আর রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংকের সঙ্গে যেন কোনো লেনদেন না করা হয়। দলীপ সিং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে এটা জানিয়ে দিয়েছেন, রাশিয়া নির্ভরযোগ্য তেল সরবরাহকারী নয়। যুক্তরাষ্ট্রের শরিক ও বন্ধু দেশগুলো রাশিয়ার ওপর থেকে তেল নিয়ে নির্ভরতা কম করছে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্টের অন্যতম পরামর্শক দলীপ সিং। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার অন্যতম কারিগরও এই দলীপ সিং। দলীপ সিং বলেছেন, ‘আমি ভারতে এসেছি বন্ধুত্বের পরিবেশে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করতে। ভারতের তেল ও প্রতিরক্ষা সামগ্রীর চাহিদা পূরণ করতে আমেরিকা তৈরি।’

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লিতে : রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভও এখন দিল্লিতে। তিনি দেখা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে।  রাশিয়া এখন ভারতকে বিপুল ডিসকাউন্টে তেল দিতে চাইছে। ইউক্রেন-সংঘাত শুরু হওয়ার আগের দামের থেকেও ব্যারেল প্রতি ৩৫ ডলার ডিসকাউন্ট দিতে চাইছে রাশিয়া। তারা চাইছে, ভারত এই বছরের জন্য নির্ধারিত ১৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল কিনে নিক।

ভারতের প্রতিক্রিয়া : ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে। তাই দেশগুলো যে নিজের মানুষের স্বার্থে অন্য বাজারের খোঁজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘আমি একটা ব্যাপারে নিশ্চিত, আমরা যদি আরও দুই তিন মাস অপেক্ষা করতাম, তাহলে দেখতাম, রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কেনার জন্য বড় বড় ক্রেতারা দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তো সেই তালিকায় প্রথম দশেও থাকব না।’ এ সময় জয়শঙ্কর পাশে ছিলেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রুস।

সর্বশেষ খবর