মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

সাংবিধানিক সংকটের অন্ধকারে পাকিস্তান

ডনের সম্পাদকীয়

রাজনীতিতে অনেকটা ‘খেলা হবে’-এর মতো অবস্থা। পাকিস্তানের অনাস্থা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বারবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তার হাতে একটি ট্রাম্প কার্ড রয়েছে। যেখানে দেশটির শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক থেকে শুরু করে সব মিডিয়া অনাস্থা ভোটে ইমরান খানের পরাজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, সেখানে কেউই ভাবেননি যে, তিনি একটি গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত দলের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে ফেলবেন।

রাজনীতিবিদ হওয়ার আগে ইমরান খান ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ক্রিকেটার। তার হাত ধরেই পাকিস্তান ক্রিকেট বিশ্বকাপের স্বাদ পায়। সে জন্যই হয়তো তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ক্রিকেটার। একটা সময় ক্রিকেট খেলেছি। যারা আমাকে জানে, তারা এটাও জানে যে, আমি শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করি।’ সেই সঙ্গে তিনি এতে জানিয়েছিলেন রাজনীতির ময়দানেও তার অন্যথা হবে না। একদম তুখোড় ফাস্ট বোলারের মতোই ইমরান খান ভেঙে দিয়েছেন পাকিস্তানের পার্লামেন্ট। কিন্তু ইমরানের এই উদ্যোগ সংবিধানকে গভীর অন্ধকারে ফেলে দিয়েছে বলে গতকাল সম্পাদকীয়তে বলেছে পাকিস্তানের প্রখ্যাত ইংরেজি দৈনিক ডন।

তাতে বলা হয়েছে, পার্লামেন্টারি প্রক্রিয়াকে বিকৃত করা একজন নেতার হাতে এখনো ক্ষমতা টিকে রয়েছে। এতে করে সাংবিধানিক সংকটের এক অন্ধকার অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হচ্ছে পাকিস্তান। স্বাভাবিক নিয়ম ভঙ্গ করে ইমরান খান সাংবিধানিকতার ওপর মারাত্মক আঘাত হেনেছেন। সেই সঙ্গে তিনি যে একটি গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলার মধ্যে সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় যোগ্য নয়- এ শঙ্কাও বেড়েছে বহুগুণ। রবিবার ইসলামাবাদে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা ভোট পরিচালনার দায়িত্ব ছিল স্পিকার আসাদ কাইজারের। কিন্তু অধিবেশন শুরুর আগেই তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন বিরোধীরা। আবেদনপত্র জমা পড়ে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সচিবালয়ে। শেষমেশ স্পিকারের আসনে বসে অনাস্থা ভোট করানোর দায়িত্ব গিয়ে পড়ে ডেপুটি স্পিকার কাশিম খান সুরির ওপর। সুরি স্পিকারের চেয়ারে বসেই বললেন, ‘আমি ডেপুটি স্পিকার হিসেবে রুলিং দিচ্ছি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করা হলো।’ তারপরই তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য অ্যাসেম্বলি মুলতবি করে দেন। কারণ হিসেবে সুরি বলেন, বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব অসাংবিধানিক। কোনোরকমের প্রমাণ ছাড়াই অনাস্থা প্রস্তাবকে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে বাতিল করে দেওয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয় ডনের সম্পাদকীয়তে। এদিকে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভির কথা উল্লেখ করে ডন বলে, সাংবিধানিকতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিবর্তে ইমরান খানের অনুগত হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর