চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়া শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে চলমান বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন দেশটির বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট ক্যাপ্টেন অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও সাবেক অধিনায়ক সনাৎ জয়সুরিয়া। গতকাল কলম্বোতে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে সাধারণ জনগণের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন সাবেক এ দুই ক্রিকেট তারকা। দেশটিতে ক্রিকেটের প্রচুর অনুরাগী রয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করার আন্দোলনে সমর্থন জানাতে দেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক এ ক্রিকেট জুটি। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর এবারই প্রথম সবচেয়ে বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও পণ্যসামগ্রীর তীব্র সংকট চলছে। আমদানিতে বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় দ্রব্যমূল্য আকাশ ছুঁয়েছে। উৎপাদনে ভাটা পড়ায় দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার এ দ্বীপ রাষ্ট্রের বাসিন্দাদের।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতে কলম্বোতে টানা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছেন হাজার হাজার মানুষ। শুক্রবার রাজাপক্ষের অফিসের বাইরে বিক্ষোভে অংশ নেন রানাতুঙ্গা। তিনি বলেন, দর্শকরাই ক্রিকেট এগিয়ে নেন। তিনি বলেন, আমাদের ভক্তরা এখন রাস্তায়। কারণ তারা আর কষ্ট সহ্য করতে পারছেন না। সবচেয়ে প্রয়োজনের সময় আমরা অবশ্যই ভক্তদের পাশে থাকব। এ প্রতিবাদে ক্রীড়া তারকাদের অবশ্যই সশরীরে যোগ দিতে হবে।
গোতাবায়া রাজাপক্ষে
এর কয়েক ঘণ্টা পর তার সহকর্মী ও সাবেক অধিনায়ক সনাৎ জয়সুরিয়া রাজাপক্ষের ঔপনিবেশিক আমলের অফিসের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে প্রতিবাদে অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন। এ সময় হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের বার্তা একেবারে স্পষ্ট। আমি আশা করছি, কর্তৃপক্ষ শুনবে এবং আমাদের সবার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে। সনাৎ জয়সুরিয়া যখন প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন তারা ‘গোতা বাড়ি যাও, বাড়ি যাও গোতা’ স্লোগান দেন। দেশটির ক্রিকেটের সাবেক এ দুই অধিনায়ক ক্রীড়াজগতের প্রথম তারকা হিসেবে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন। এর আগে, দেশটির অন্য অনেক তারকাও বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন সাবেক ক্রিকেট তারকা মাহেলা জয়াবর্ধনে। এ ছাড়া সাবেক লঙ্কান ক্রিকেট অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারা প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।
সংকট সত্ত্বেও ২১ বিমান ইজারা নিতে চায় লঙ্কান এয়ারলাইন্স! : স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খাওয়া শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্সের প্রায় দুই ডজন বিমান ইজারা নেওয়ার একটি পরিকল্পনা সাধারণ জনগণ ও বিরোধীদের তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার মুখে পড়েছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের চরম সংকটে দেউলিয়া হওয়ার অবস্থা হয়েছে ভারত মহাসাগরের ছোট্ট এ দ্বীপরাষ্ট্রটি। গত দুই বছরে তাদের রিজার্ভ ৭০ শতাংশের বেশি কমেছে, মার্চের শেষে এসে যা ১৯৩ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রিজার্ভের এ সংকটের কারণে দেশটিতে জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে; এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দ্বীপদেশটির বাসিন্দাদের দিনে ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা লোডশেডিংও সহ্য করতে হচ্ছে। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কা জানায়, তারা বিদেশি ঋণের কিছু কিস্তির পরিশোধ আপাতত স্থগিত রাখছে আর হাতে যে অল্প পরিমাণ ডলার রয়েছে তা তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে কাজে লাগাতে চায়। শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীরা প্রতিদিনই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতে তার কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে ধাপে ধাপে ৪২টি বিমান ইজারা নেওয়ার দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারি ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পর্যটন ব্যবসায় ধস শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সকেও বিপদে ফেলেছে। ২০১৯-২০ সালেই তাদের ৪ হাজার ৪১৪ কোটি লঙ্কান রুপি লোকসান হয়েছে, আগের বছরও যার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১৭০ কোটি। এএফপি
