বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
রাশিয়া থেকে ইউরোপে সরবরাহ

গুরুত্বপূর্ণ গ্যাসলাইন বন্ধ করছে ইউক্রেন

গুরুত্বপূর্ণ গ্যাসলাইন বন্ধ করছে ইউক্রেন

রাশিয়া থেকে ইউক্রেনের ওপর দিয়ে যেসব লাইনের মাধ্যমে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করা হতো, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি লাইন বন্ধ করে দিচ্ছে ইউক্রেন। গতকালই এই লাইন বন্ধ করে দেওয়ার কথা।

ইউক্রেনের গ্যাস ব্যবস্থাপনা কোম্পানি জিটিএসওই জানিয়েছে, তাদের দেশের ভিতর দিয়ে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের পাইপ লাইনের গুরুত্বপূর্ণ একটি ট্রানজিট পয়েন্ট তারা বন্ধ করে দিচ্ছে। এই লাইন দিয়ে ইউরোপে রাশিয়ার রপ্তানির এক তৃতীয়াংশ গ্যাস যায়।

রয়টার্স জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের জন্য মস্কোকেই দায়ী করেছে জিটিএসওইউ।  রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সেনা অভিযান শুরু করে। ইউক্রেনে অভিযান চালালেও দেশটির ওপর দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রেখেছিল মস্কো।

এদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম দাবি করেছে, জিটিএসওইউ এর পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই বিপুল পরিমাণ গ্যাস সুদঝা ইন্টারসেকশন দিয়ে আরও পশ্চিমে নিয়ে যাওয়া কারিগরিভাবে ‘সম্ভব নয়’।

অন্যদিকে জিটিএসওইউ’র প্রধান নির্বাহী সের্গেই মাকোগোন বলেছেন, দখলদার রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ভিতর দিয়ে রাশিয়া-সমর্থিত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দুটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে গ্যাস সরিয়ে নিচ্ছে। তবে তিনি এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। জিটিএসওইউর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নোভোপস্কভ গ্যাস কমপ্রেসর স্টেশন তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তার বদলে জিটিএসওইউ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় সুদঝা ইন্টারকানেকশন পয়েন্টের গ্যাস প্রবাহকে সাময়িকভাবে অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলছে। ইউক্রেনের রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস কোম্পানি নাফতোগ্যাজের প্রধান ইউরি ভিতরেনকো বলেছেন, সোখরানিভকা লাইন দিয়ে গ্যাস প্রবাহ আটকে দিলেও দেশের অভ্যন্তরীণ গ্যাস সরবরাহে প্রভাব পড়বে না। গ্যাজপ্রম জানিয়েছে, তারা জিটিএসওইউর কাছ থেকে নোটিস পেয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, বুধবার সকাল ৭টা থেকে সোখরানিভকা ইন্টারকানেকশন দিয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। ইউক্রেনের প্রতিবেশী মলদোভা জানিয়েছে, গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন হতে পারে- এ ধরনের কোনো নোটিস তারা জিটিএসওইউ বা গ্যাসপ্রমের কাছ থেকে পায়নি। মলদোভা রাশিয়ার গ্যাসের অন্যতম গ্রাহক। ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার সেনা অভিযান শুরুর পরপরই ইউক্রেনের পূর্বে লুহানস্ক অঞ্চলের নোভোপসকভ কম্প্রেসর স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ নেয় রুশ বাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। জিটিএসওইউ জানিয়েছে, ওই কম্প্রেসর পয়েন্ট দিয়ে রাশিয়া দৈনিক ৩২ দশমিক ৬ ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করে, যা ইউরোপে সরবরাহ করা রুশ গ্যাসের এক-তৃতীয়াংশ।

রাশিয়ার তেল না কিনলে ইউরোপ বাঁচবে না : ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধজয়ের চেষ্টাকে পণ্ড করে দিতে ইউরোপ নানাভাবে চেষ্টা করছে। এ জন্য রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। পাশাপাশি রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস আমদানি কমিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কোনোটার কি রাশিয়ান ঘাটতি পূরণের প্রাযুক্তিক সক্ষমতা রয়েছে? তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যেটি- তাদের কি এ বিষয়ে আদৌ আগ্রহ আছে?

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, যদি ইইউ রাশিয়ান তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তাহলে ইউরোপের দৈনন্দিন চাহিদার তুলনায় ২২ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও ১২ লাখ ব্যারেল পেট্রোলিয়াম জ্বালানির সরবরাহ কমে যাবে। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিশ্বের মোট তেলের প্রমাণিত মজুতের প্রায় অর্ধেকের মালিক, তবুও বেশকিছু কারণে এ দেশগুলো হয়তো ইউরোপের বিপদে ত্রাতা হিসেবে ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হতে পারে। এ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে এখানকার অবকাঠামোতে বিনিয়োগের অভাব, সংঘাত, রাজনৈতিক জোট, নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি।

সর্বশেষ খবর