রবিবার, ১৫ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
করোনায় আরও ২১ মৃত্যু

মহামারি নিয়ন্ত্রণে লড়াইয়ের ডাক

মহামারি নিয়ন্ত্রণে লড়াইয়ের ডাক

কিম জং উন

কভিড-১৯ দেশকে ‘মহাগোলযোগে’ ফেলেছে মন্তব্য করে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন মহামারি কাটিয়ে উঠতে সর্বাত্মক লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন। দেশটিতে জ্বরে ৬ জনের মৃত্যুর কথা জানানোর পরদিন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে আরও ২১ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মহামারি শুরুর পর দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশে কোনো সংক্রমণ নেই দাবি করে আসা উত্তর কোরিয়া মাত্র কয়েকদিন আগেই তাদের প্রথম কভিড প্রাদুর্ভাবের বিরল স্বীকারোক্তি দেয়। যদিও দেশটিতে ভাইরাস শনাক্ত ও আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যাপক কার্যক্রম চলার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। রোগী শনাক্তে পরীক্ষার সক্ষমতা সীমিত হওয়ায় উত্তর কোরিয়া এখন পর্যন্ত যত আক্রান্তের তথ্য দিয়েছে, তা সম্ভবত মোট আক্রান্তের খুব সামান্য অংশ। টিকাদান কর্মসূচির বাইরে থাকা বিশ্বের মাত্র দুটি দেশের একটি হওয়ায় দেশটির এ প্রাদুর্ভাব হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু নিয়ে আসতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। এই পরিস্থিতিতে দেশটির ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টি এক জরুরি বৈঠকে বসে এপ্রিলের শেষ দিক থেকে অজ্ঞাত উৎসের জ্বরে মোট ২৭ মৃত্যু ও ২ লাখ ৮০ হাজার ৮১০ জনের চিকিৎসা লাভের বিষয়টি শুনেছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ। ‘দুষ্ট এই মহামারির বিস্তৃতি আমাদের দেশকে প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে বড় গোলযোগে ফেলেছে। কিন্তু যদি আমরা মহামারি নীতি বাস্তবায়নে নজর সরিয়ে না ফেলি এবং দলের শক্তিশালী সাংগঠনিক ক্ষমতা ও জনগণের একক ঐক্যের ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে পারি, তাহলে আমরা এই সংকট কাটিয়ে ওঠার চেয়েও বেশি কিছু করতে পারব,’ কিম বৈঠকে এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে কেসিএনএ। নতুন যাদের মৃত্যুর খবর এসেছে তাদের মৃত্যুর কারণ কভিড কিনা তা পরিষ্কার করেনি রাষ্ট্রীয় এ গণমাধ্যম। এর আগে শুক্রবার কেসিএনএ করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের কারণে দেশটির এক নাগরিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল। ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষের মৃত্যুর কারণ অতিরিক্ত ওষুধ দেওয়াসহ নানান ধরনের গাফিলতি, যা চিকিৎসা পদ্ধতি বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে হয় বলে বৈঠকে উত্থাপিত মহামারি নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,’  বলেছে কেসিএনএ। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, শুক্রবারের ১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৪০ জনসহ এপ্রিলের শেষভাগ থেকে মোট ৫ লাখ ২৪ হাজার মানুষের দেহে জ্বরের লক্ষণ দেখা গেছে; এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

তবে কতজনের দেহে ভাইরাস শনাক্তে পরীক্ষা হয়েছে এবং উত্তর কোরিয়ায় মোট কভিড আক্রান্তের সংখ্যা কত তা জানায়নি রাষ্ট্রীয় এ বার্তা সংস্থা। দেশটিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পে কাজ করা হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের কি পার্ক জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ায় সপ্তাহে মাত্র ১ হাজার ৪০০-র মতো শনাক্ত পরীক্ষা হয়, যা লক্ষণ থাকা লাখ লাখ লোকের পরিস্থিতি বোঝার জন্য যথেষ্ট নয়। ওয়ার্কার্স পার্টির জরুরি বৈঠকে কিম বলেছেন, মহামারি ঠেকাতে দলীয় সংগঠনের অযোগ্যতা ও দায়িত্বহীনতার কারণেই এই স্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি এবং লড়াইয়ের মাধ্যমে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে এমন বিশ্বাস থাকতে হবে। কষ্টপীড়িত পরিবারগুলোর ব্যবহারের স্বার্থে তিনি তার ঘরে থাকা মেডিকেল সরঞ্জাম দান করার আশ্বাসও দিয়েছেন। কিম স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদেরকে মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীনসহ বিভিন্ন অগ্রসর দেশের অর্জনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতেও বলেছেন বলে জানিয়েছে কেসিএনএ।

সর্বশেষ খবর