শনিবার, ২১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

দনবাস নরকে পরিণত হয়েছে : জেলেনস্কি

দনবাস নরকে পরিণত হয়েছে : জেলেনস্কি

ইউক্রেনের মারিউপোলের ইলাইচ লৌহ ও ইস্পাত কারখানা। দিন কয়েক আগেও সেখানে উৎপাদন হতো লাখ লাখ টন ইস্পাত। রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এটি গতকাল ধ্বংস হয়ে গেছে -এএফপি

ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল ধ্বংস হয়ে গেছে। এ মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার রাতে দেশবাসীর উদ্দেশে এক ভাষণে তিনি বলেন, রুশ জবরদখলকারীরা দেশের পূর্বাংশে দনবাস অঞ্চলে মানুষের ওপর আরও নির্যাতন বাড়িয়েছে। তারা অঞ্চলটি নরক বানিয়ে ফেলেছে। তাঁর অভিযোগ, দনবাস অঞ্চলের পূর্বপ্রান্ত রুশ সেনার হাতে ছারখার হয়ে গেছে। নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করেছে তারা। কমেডিয়ান থেকে দেশনায়ক হয়ে ওঠা জেলেনস্কি বলেন, ‘দনবাসে হানাদাররা প্রবল চাপ তৈরি করছে। অঞ্চলটিকে নরকে পরিণত করেছে তারা। নিরীহ ইউক্রেনীয়দের হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘরবাড়ি, পরিকাঠামো ধ্বংস করছে হানাদাররা।’ তিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার লুহানস্কের সেভেরডোনেৎস্ক শহরে ভয়াবহ বোমাবর্ষণ করে রাশিয়ার সেনা। বোমার আঘাতে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১২ জনের। ওডেসা এলাকা ও ইউক্রেনের কেন্দ্রভাগের শহরগুলোর ওপর ক্রমাগত হামলা চলছে। মরিউপোল শহরে মারাত্মক সংঘর্যের পর ইউক্রেন আপাতত পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রুশ সূত্র অনুযায়ী এখনো পর্যন্ত ১ হাজার ৭৩০ জন ইউক্রেনীয় যোদ্ধা আত্মসমর্পণ করেছে। তবে আজভ রেজিমেন্টের উপপ্রধান সভিয়াতোস্লাভ পালামার একটি ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করেছেন, তিনি এবং বাকি কমান্ডাররা এখনো ইস্পাত কারখানার মধ্যেই রয়েছেন। তিনি এক গোপন অভিযানের উল্লেখ করেন। কিয়েভ সরকার রাশিয়ার হাতে আটক যোদ্ধাদের মুক্তির জন্য বন্দিবিনিময়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের আর্থিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে আরও নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মার্কিন সংসদের উচ্চ কক্ষ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে সে দেশের জন্য প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। মার্কিন ইতিহাসে এর আগে অন্য কোনো দেশকে এত বড় অঙ্কের সহায়তা দেওয়া হয়নি। শিল্পোন্নত দেশগুলোর গোষ্ঠী জি-সেভেনও ইউক্রেনের জন্য ১৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করতে রাজি হয়েছে। এ দেশগুলোর মতে, অস্ত্র সরবরাহের মতো আর্থিক সহায়তাও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের আরও দ্রুত জয় নিশ্চিত করবে।

ইউক্রেনের জন্য আরও ভারি অস্ত্রের জোগানও অব্যাহত রয়েছে। রাশিয়া সে দেশের উপকূল অবরোধ করে রাখায় মার্কিন প্রশাসন ইউক্রেনকে জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর তোড়জোড় করছে। মার্কিন পররাষ্ট্র অ্যান্টনি ব্লিংকেন মস্কোর বিরুদ্ধে খাদ্য সরবরাহকে ‘জিম্মি’ হিসেবে অপব্যবহার করার অভিযোগ এনেছেন। শুধু ইউক্রেনের মানুষ নয়, গোটা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী শস্য, রান্নার তেল, জ্বালানি ও সারের মূল্য অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গেছে। অবরোধ তুলে নেওয়ার শর্ত হিসেবে রাশিয়া সে দেশের রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি করেছে।

রাশিয়ার ওপর আরও চাপ বাড়াতে পশ্চিমা দেশে রুশ শিল্পপতিদের সম্পদ কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনের পুনর্গঠনের কথাও ভাবা হচ্ছে। বিদেশে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্পদও সে কাজে লাগানোর জন্য চাপ বাড়ছে। উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। কিন্তু এখনো কিয়েভ দখল করতে পারেনি তারা। লড়াইয়ে কয়েক হাজার সেনা ও বিপুল অস্ত্র খুইয়ে গত এপ্রিলে সামরিক অভিযানের প্রথম পর্বে ইতি টানার কথা ঘোষণা করে রাশিয়া। পাশাপাশি, মারিউপল ও দনবাস অঞ্চলে অভিযান তীব্র করে তোলে পুতিনের বাহিনী। এখনো দনবাসের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে ইউক্রেনীয় ফৌজের।

প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলে জানা যায়, ইউক্রেন যদি মস্কোর বেঁধে দেওয়া শর্তাবলি মেনে নেয় তাহলে সেদেশে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বন্ধ করবে রাশিয়া। সূত্রের খবর, যুদ্ধ বন্ধ করার প্রধান শর্ত হচ্ছে ইউক্রেন যেন কোনোভাবেই ন্যাটো গোষ্ঠীতে যোগ না দেয়। তাছাড়া, অধিকৃত ক্রিমিয়া অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে কিয়েভকে। পাশাপাশি, রুশপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দনবাসের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন ঘোষণা করতে হবে জেলেনস্কি সরকারকে।

সর্বশেষ খবর