রবিবার, ২৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

নতুন ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন ইরানের

ইরানের সশস্ত্র বাহিনী নতুন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন উন্মোচন করেছে। ইরানের নতুন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রটির নাম রাখা হয়েছে ‘হেইদার-১’ এবং ড্রোনটির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘হেইদার-২’। গতকাল ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ বাকেরি। ভূগর্ভস্থ ড্রোন ঘাঁটি পরিদর্শনের সময় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রটির নাম রাখা হয়েছে ‘হেইদার-১’। এটি ইরানের বিমান বাহিনীর ড্রোন ‘কামান-২২’ এ বসানোর পাশাপাশি সেখান থেকেই নিক্ষেপ করা যায়। হেইদার-১ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ২০০ কিলোমিটার এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের সময় এর গতি থাকে ঘণ্টায় এক হাজার কিলোমিটার। এটি ইরানের প্রথম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র যা ড্রোন থেকে নিক্ষেপ করা যায়। এ ছাড়া যে ড্রোনটি উন্মোচন করা হয়েছে সেটার নাম দেওয়া হয়েছে, হেইদার-২। এটি হেলিকপ্টারে বসানো যায়।   এদিকে গ্রিসের উপকূলে আটক করা একটি ট্যাংকারের ইরানি তেল যুক্তরাষ্ট্র বাজেয়াপ্ত করায় পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পারস্য উপসাগরে গ্রিসের দুটি জাহাজ জব্দ করেছে ইরান। ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে, তেহরান এমন সতর্কতা জানানোর কিছুক্ষণ পর শুক্রবার ইরানি বাহিনী ওই দুটি জাহাজ জব্দ করে। রয়টার্স

এক বিবৃতিতে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস বাহিনী বলেছে, ‘রেভল্যুশনারি গার্ড নৌবাহিনী পারস্য উপসাগরের জলসীমা লঙ্ঘনের দায়ে দুটি গ্রিস ট্যাংকার জব্দ করেছে।’

ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আইআরএনএর প্রতিবেদনে দেওয়া উদ্ধৃতিতে রেভল্যুশনারি গার্ডস ওই তথ্য জানালেও আর বিস্তারিত বা কী লঙ্ঘন করেছে সে বিষয়ে কিছু জানায়নি। গ্রিসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইরানের উপকূল থেকে ২২ নটিক্যাল মাইল দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমা দিয়ে যাওয়ার সময় গ্রিসের পতাকাবাহী জাহাজ ডেল্টা পোসেইদনে ইরানের নৌবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার এসে নামে আর ক্রুদের জিম্মি করে, তাদের মধ্যে দুজন গ্রিসের নাগরিক। ইরানের কাছে গ্রিসের পতাকাবাহী আরেকটি নৌযানেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তারা, তবে জাহাজটির নাম জানাননি।

উভয় ঘটনাতেই আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রিসের। দেশটি জানিয়েছে, নিজেদের মিত্রদের জানানোর পাশাপাশি এথেন্সে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। ডেল্টা পোসেইদনের পরিচালনা কোম্পানি গ্রিসভিত্তিক ডেল্টা ট্যাংকারের মন্তব্য নেওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত মাসে নিজেদের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ এভিয়ার উপকূলের কাছে ইরানের পতাকাবাহী পেগাস ট্যাংকার জব্দ করেন গ্রিস কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে জাহাজটিতে থাকা রাশিয়ার ১৯ জন ক্রুকেও আটক করে।

পরে যুক্তরাষ্ট্র জাহাজটিতে থাকা ইরানি তেল বাজেয়াপ্ত করে ওই কার্গো আরেকটি জাহাজে তুলে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে বলে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স। পরে পেগাস ট্যাংকারটিকে ছেড়ে দেওয়া হলেও এ ঘটনা বিদ্যমান উত্তেজনায় আরও ইন্ধন জোগায়। আর এমন এক সময় ঘটনাটি ঘটে যখন বিশ্ব শক্তিগুলো ইরানের সঙ্গে থাকা পারমাণবিক চুক্তিটি আবার পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে এ চুক্তিটি বর্জন করেছিল ওয়াশিংটন। শুক্রবার সকালে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত নুর নিউজ টুইটারে বলেছে, ‘গ্রিস সরকার কর্তৃক ইরানের ট্যাংকার জব্দ ও ইরানের তেল আমেরিকায় পাঠিয়ে দেওয়ার পর ইরান গ্রিসের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তবে তারা কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে তা জানায়নি। ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর আগে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা খাতের সঙ্গে যুক্ত প্রমসুয়েজব্যাংকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ওই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ওয়াশিংটন যে পাঁচটি নৌযানকে তালিকভুক্ত করে পেগাস ছিল তার একটি। পেগাস ট্যাংকারের কার্গো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কি না তা পরিষ্কার হয়নি, কারণ ওই তেল ইরানের আর ওই ট্যাংকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে। ইরান ও রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে। পরে ইরানের আধাস্বায়ত্তশাসিত বার্তা সংস্থা তাসনিম একটি অনামা সূত্র উদ্ধৃত করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, ‘পারস্য উপসাগরে গ্রিসের ১৭টি জাহাজ আছে। দেশটি যদি তাদের ক্ষতিকর আচরণ অব্যাহত রাখে তাহলে রেভল্যুশনারি গার্ড সেগুলোও জব্দ করতে পারে।’

সর্বশেষ খবর