বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ডেনমার্কেও জ্বালানি রপ্তানি বন্ধ করল রাশিয়া

ডেনমার্কেও জ্বালানি রপ্তানি বন্ধ করল রাশিয়া

এর আগে ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাস দেওয়া বন্ধ করে দেয় রাশিয়া। এবার সেই বন্ধের তালিকায় পড়ল ইউরোপের দেশ ডেনমার্ক। রুবলে দাম পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় মস্কোর তরফ থেকে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ডেনমার্কের বড় জ্বালানি কোম্পানি ওরস্টেড জ্বালানি বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে রুশ জ্বালানি ছাড়াই দেশের মধ্যকার চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে কোম্পানিটি। এ খবর দিয়েছে আল-জাজিরা।

ওরস্টেডের সিইও ম্যাডস নিপার বলেন, আমরা রুবলে অর্থ পরিশোধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। আগে থেকেই এ দিনের জন্য প্রস্তুত ছিল ডেনমার্ক। এই অবস্থা আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবশ্যই রাশিয়ার গ্যাসের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে হবে এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস খুঁজতে হবে। এর আগে একই অভিযোগে ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড এবং বুলগেরিয়ায় গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে মস্কো। এই দেশগুলো রুবল দিয়ে রুশ গ্যাস আমদানির নিয়ম প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে ইউরোপের অন্তত দুই ডজন কোম্পানি রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি অব্যাহত রাখতে রুবলে দাম পরিশোধ করতে শুরু করেছে। আরও এক ডজন কোম্পানি রুবল অ্যাকাউন্ট খুলতে চলেছে।

ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর থেকেই ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এমন পরিস্থিতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৩১ মার্চ ‘অবন্ধুসুলভ’ দেশগুলোর জন্য গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধ সংক্রান্ত একটি ডিক্রিতে সই করেন। এর পর রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করতে রাজি না হওয়ায় ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়াকে প্রাকৃতিক গ্যাস দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রুবলে কারা মূল্য পরিশোধ করছে : ইউরোপীয় কমিশন প্রধান ফন ডার লিয়েন সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়ার দাবি মেনে রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করার অর্থ হচ্ছে ইইউর নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করা এবং কোনো কোম্পানি তা করলে তারা ‘উচ্চ ঝুঁকি’তে পড়বে। রাশিয়ার জ্বালানি পণ্যের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কত দ্রুত কমানো যায় তা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। জার্মানি, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার মতো দেশের গ্যাস কোম্পানিগুলো রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ব্যাংকের মাধ্যমে ইউরোতে গ্যাসের মূল্য পরিশোধে রাজি হয়েছে, যা পরে ওই ব্যাংকের মাধ্যমে রুবলে বদলে নেওয়া হবে। যুক্তরাজ্যের পত্রিকা দ্য ফিন্যানশিয়াল টাইমস জানিয়েছে, অস্ট্রিয়া ও ইতালির গ্যাস কোম্পানিগুলোও গ্যাজপ্রম ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার পরিকল্পনা করছে।

ইইউ জানিয়েছে, যদি রাশিয়ার গ্যাসের ক্রেতারা গ্যাসের মূল্য ইউরোতে পরিশোধ করতে পারে এবং তা রুবলে বদলে যাওয়ার আগেই তা নিশ্চিত করতে পারে সেক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ হয়নি বলে বিবেচনা করা হবে। যদিও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যার ভিন্নতা রয়েছে এবং জোটের কূটনীতিকরা জানিয়েছেন তারা এ নিয়ে আরও স্পষ্টতা চান।

ইউরোপে কী পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া : ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২০১৯ সালে মোট গ্যাস আমদানির ৪১ শতাংশ এসেছিল রাশিয়া থেকে। যদি রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে বিশেষ করে জার্মানি ও ইতালি বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে কারণ তারাই সবচেয়ে বেশি গ্যাস আমদানি করে থাকে। যুক্তরাজ্যের চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ গ্যাস রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র সেদেশ থেকে কোনো গ্যাস আমদানি করে না। রাশিয়া থেকে একাধিক মূল পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ওই গ্যাস আঞ্চলিক মজুদাগারে মজুদ করা হয় এবং সেখান থেকে ইউরোপজুড়ে তা সরবরাহ করা হয়।

রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প কী : রাশিয়ার বিকল্প হিসেবে কাতার, আলজেরিয়া বা নাইজেরিয়ার মতো গ্যাস রপ্তানিকারকদের কাছে যেতে পারে ইউরোপের দেশগুলো, কিন্তু এই গ্যাস উৎস পরিবর্তন দ্রুত বাস্তবায়নের পথে কিছু বাস্তবিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর