মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

পারমাণবিক অস্ত্র বৃদ্ধির দিকে ঝুঁকছে বিশ্ব

পারমাণবিক অস্ত্র বৃদ্ধির দিকে ঝুঁকছে বিশ্ব

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বের সব প্রভাবশালী দেশ ফের নড়েচড়ে বসেছে। তাই তো সব পরমাণু শক্তিধর দেশই এখন তাদের অস্ত্রগুলোর আধুনিকায়ন করছে বা করার পরিকল্পনা করছে। সবচেয়ে বেশি পরমাণু বোমা আছে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার হাতে। এ দুটি দেশের হাতে আছে ১৫ হাজার বোমা। তবে এ হিসাবে এমন বোমাও ধরা হয়েছে যেগুলো এখন ‘অবসরে’ যাচ্ছে অর্থাৎ এগুলো অচিরেই খুলে ফেলা হবে। স্টকহোমের একটি শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, ১৯৮০-এর দশকে পারমাণবিক বোমা বা ওয়ারহেডের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০ হাজার। তবে সেই স্নায়ুযুদ্ধের আবহে আবার ফিরতে চলেছে বিশ্ব। আসছে বছরগুলোয় প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এ ধরনের অস্ত্রের ব্যবহারের ঝুঁকিও কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, বলেছে সংঘাত ও অস্ত্র বিষয়ক শীর্ষস্থানীয় একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক।

গতকাল বেশ কয়েকটি নতুন গবেষণা ফলাফলে এ ধারণা প্রকাশ করেছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)। সংস্থাটি বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ও কিয়েভের প্রতি পশ্চিমা সমর্থন বিশ্বের নয়টি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। জানুয়ারি, ২০২১ থেকে জানুয়ারি, ২০২২ পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা কিছুটা কমলেও পারমাণবিক শক্তির দেশগুলো আশু পদক্ষেপ না নিলে শিগগিরই কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশ্বে এ ধরনের যুদ্ধাস্ত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হতে পারে। থিঙ্কট্যাঙ্কটির ২০২২ ইয়ারবুকে এসআইপিআরআইয়ের ‘উয়েপন্স অব মাস ডিস্ট্রাকশন প্রোগ্রাম’-এর পরিচালক উইলফ্রেড ওয়ান বলেছেন, ‘সব পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ তাদের অস্ত্র বাড়াচ্ছে অথবা উন্নয়ন ঘটাচ্ছে এবং অধিকাংশই পারমাণকি অস্ত্র নিয়ে তির্যক মন্তব্য করছে এবং তাদের সামরিক কৌশলগুলোয় পারমাণবিক অস্ত্র ভূমিকা রাখছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক প্রবণতা।’

মস্কো ইউক্রেনে কথিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করার তিন দিন পর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার পারমাণবিক প্রতিরোধককে উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখার নির্দেশ দেন। রাশিয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো দেশগুলোকে এর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘তা এমন হতে পারে যা তোমাদের পুরো ইতিহাসে তোমরা কখনো দেখনি।’ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দেওয়া তথ্যানুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মোট ৫ হাজার ৯৭৭টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে রাশিয়ার, যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে প্রায় ৫৫০টি বেশি। বিশ্বের মোট পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রের ৯০ শতাংশের বেশি এ দুই দেশের কাছে আছে।

তবে এসআইপিআরআই বলছে, অনুমানিক ৩   শতাধিক নতুন ক্ষেপণাস্ত্র গুদামসহ চীন অস্ত্র বৃদ্ধির মাঝামাঝি পর্যায়ে আছে। এর মধ্যে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গহি গত পরশু মন্তব্য করেছেন, নতুন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে চীন ‘ব্যাপক অগ্রগতি’ অর্জন করেছে। তবে চীন কেবল আত্মরক্ষার জন্যই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে। রবিবার সিঙ্গাপুরে ‘শাংরি-লা ডায়ালগ’ শীর্ষক নিরাপত্তা সম্মেলনে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। চীন দেশটির পূর্বাঞ্চলে ১০০-এর বেশি নতুন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র সাইলো (ভূগর্ভস্থ অস্ত্রাগার) নির্মাণ করছে বলে গত বছর একাধিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফেঙ্গহি আরও বলেন, ‘দেশের সুরক্ষার জন্য পারমাণবিক সামর্থ্য অর্জনে সব সময় সঠিক পথই অনুসরণ করে আসছে চীন।’

তবে এসআইপিআরআই জানিয়েছে, জানুয়ারি, ২০২১-এ বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রের সংখ্যা ১৩ হাজার ৮০ থেকে কমে জানুয়ারি, ২০২২-এ ১২ হাজার ৭০৫টিতে দাঁড়ায়। এর মধ্যে আনুমানিক ৩ হাজার ৭৩২টি যুদ্ধাস্ত্র ক্ষেপণাস্ত্র ও এয়ারক্রাফটগুলোয় মোতায়েন করে রাখা হয়েছে এবং ২ হাজারের মতো পুরোপুরি প্রস্তুত অবস্থায় রাখা আছে যার প্রায় সবই রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের।

সর্বশেষ খবর