শনিবার, ১৮ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

‘অগ্নিপথ’ ইস্যুতে ভারতজুড়ে উত্তাপ

আরও তিন ট্রেনে আগুন, মৃত ১

কলকাতা প্রতিনিধি

‘অগ্নিপথ’ ইস্যুতে ভারতজুড়ে উত্তাপ

অগ্নিপথ প্রকল্পের প্রতিবাদে ভারতের সেকেন্দরাবাদে একটি ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা -এএফপি

নরেন্দ্র মোদি সরকারের সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগসংক্রান্ত প্রকল্প ‘অগ্নিপথ’ বাতিলের দাবিতে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ চরমে। গোবলয়ের   রাজ্যগুলোর পর এবার অগ্নিপথের ‘আগুন’ চলে গেছে তেলেঙ্গানায়ও। সেকেন্দরাবাদে মারা গেছেন একজন। আহত অন্তত ১৫ জন। তিনটি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন  বিক্ষোভকারীরা। মঙ্গলবার চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা জানানো হয়। বলা হয়- অগ্নিপথ প্রকল্পের আওতায় চার বছরের জন্য যারা নির্বাচিত হবেন তারা ‘অগ্নিবীর’ আখ্যায়িত হবেন। নতুন এ প্রকল্পে চার বছরের মেয়াদ শেষে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ২৫ ভাগকে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে সেনাবাহিনীতে নেওয়া হবে। বাকিদের সেনাবাহিনীতে রাখা হবে না। যুব সম্প্রদায়ের একাংশের ক্ষোভ, সেনা কর্মীরা যে পেনশন সম্পর্কিত সুবিধা পান তা যাতে না দিতে হয় সেজন্যই এ প্রকল্প।

আর এ ঘোষণার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে ভারত। চার দিন ধরে বিহার, হরিয়ানা, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিহারে। রাজ্যটির গয়া, পাটনা, বক্সারসহ একাধিক জায়গায় রেল, বাস, জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিক্ষোভের হাত থেকে রেহাই পায়নি বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী রেণু দেবীর বাড়ি। এদিন সকালে বেতাই জেলায় তাঁর বাড়িতে হামলা চালায় একদল বিক্ষোভকারী। গতকালও পশ্চিমবঙ্গসহ একাধিক রাজ্যে বিক্ষোভ হয়েছে। এদিন সকালেও বিহারের লক্ষ্মীসরাইতে একটি ট্রেনে আগুন লাগানো হয়। তাতে এক যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। উত্তর প্রদেশের বারানসিতে যাত্রীবাহী বাসে হামলা, ভাঙচুর হয়। তেলেঙ্গানার সেকেন্দরাবাদে ট্রেন লক্ষ্য করে ছোড়া হয় পাথর।

এদিকে বিক্ষোভের সময় দিল্লিতে আটক হয়েছেন ২৫ জন, তামিলনাড়ুতে ৩৫ জন। প্রতিবাদ বিক্ষোভের কারণে পূর্ব-মধ্য রেলের ৫৯টি ট্রেন বাতিল করা হয়। গোটা দেশে রেলব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেশজুড়ে বিক্ষোভ, প্রতিবাদের মধ্যেই কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস সংসদ সদস্য রাহুল গান্ধী। তাঁর অভিমত- আসলে দেশের মানুষ কী চায় নরেন্দ্র মোদি তা বুঝতেই পারছেন না। কেননা বন্দুকের শব্দ ছাড়া আর কিছুই ওঁর কানে যায় না। অন্যদিকে এ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পাঠিয়েছেন কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এদিকে চাপে পড়ে সেনাবাহিনীতে নিযুক্তির অগ্নিপথ প্রকল্পে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগে ওই প্রকল্পের বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ছিল ২১ বছর কিন্তু বৃহস্পতিবার তা বাড়িয়ে ২৩ বছর করা হয়।

 

কেন অগ্নিপথ

অস্থায়ী ভিত্তিতে এভাবে সেনা নিয়োগ হলে বেতন ও পেনশন বাবদ কেন্দ্রের অনেক অর্থ সাশ্রয় হবে। সে টাকা সেনার প্রযুক্তির উন্নতির কাজে লাগানোর ভাবনা রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের। কেনা হবে আরও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। সেই সঙ্গে দেশের যুবসমাজ সরাসরি দেশসেবা এবং প্রশিক্ষণ নেওয়ারও সুযোগ পাচ্ছে।

কাদের নিয়োগ করা হবে : দেশসেবায় আগ্রহী তরুণ-তরুণীরা অগ্নিবীর হিসেবে কাজ করতে পারবেন। নিয়োগের ক্ষেত্রে সেনার যে বিভাগে আগে যা শারীরিক সক্ষমতার শর্ত ছিল সেটাই মানা হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল।

বয়সসীমা : ন্যূনতম বয়স ১৭.৫ বছর। সর্বোচ্চ ২১ বছর। শুধু এ বছরের জন্য বয়সের সর্বোচ্চ সীমা শিথিল করে ২৩ বছর করা হচ্ছে।

কী কী সুবিধা : বার্ষিক বেতন ৪.৭৬ থেকে ৬.৯২ লাখ টাকা পর্যন্ত। আয়ের ৩০ শতাংশ ‘সেবা নিধি’তে জমানো যাবে। সমপরিমাণ টাকা দেবে সরকারও। বেতনের পাশাপাশি মিলবে রেশন, উর্দি ও যাতায়াত ভাতা। চার বছরের মেয়াদ শেষে কাজের ভিত্তিতে ২৫ শতাংশকে দেওয়া হবে সেনার স্থায়ী কমিশন। বাকি ৭৫ শতাংশকে এককালীন ১১.৭ লাখ টাকা ভাতা দেওয়া হবে। কোনো অবসরকালীন সুবিধা পাবে না। অগ্নিবীর হিসেবে কাজ করার সময় অঙ্গহানি হলে ১৫ থেকে ৪৪ লাখ টাকা অনুদান, সেই সঙ্গে মিলবে চাকরি জীবনের বাকি মেয়াদের বেতন। অগ্নিপথ চালুর পর সেনার নিম্নপদে স্থায়ী নিয়োগ আপাতত বন্ধ হচ্ছে। অগ্নিবীর হিসেবে নিযুক্ত হলেও চার বছর পর তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত সেনায় চাকরিপ্রার্থীরা। স্থায়ী কমিশন না পেলে কোনোরকম অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা না পাওয়াটা বিক্ষোভের অন্যতম কারণ। বয়সের ঊর্ধ্বসীমার জন্য বছরের পর বছর সেনার চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া যুবক-যুবতীরা চাকরির সুযোগই পাচ্ছেন না।

সর্বশেষ খবর